মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আরাকান আর্মি: স্বাধীনতাকামী মুখোশের আড়ালে  এক মাদকসন্ত্রাসী কার্টেল

news_1756725595212

আরাকান আর্মি (এএ) কোনো প্রতিরোধ আন্দোলন নয়, বরং সীমান্তজুড়ে সক্রিয় একটি ভয়ংকর মাদক কার্টেল। স্বাধীনতা সংগ্রামের মুখোশের আড়ালে এএ-র নেতারা গড়ে তুলেছে বিলিয়ন ডলারের অপরাধ সাম্রাজ্য। যা এশিয়াকে মাদক দিয়ে বিষাক্ত করছে। রোহিঙ্গাদের দাসে পরিণত করছে এবং যুদ্ধাপরাধের মাধ্যমে কালো টাকা সাফ করছে।

সেনা পোশাকে মাদকের সাম্রাজ্য

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী এএ আরাকান ও শান রাজ্যের পাহাড়-জঙ্গলে ৪৫টিরও বেশি গোপন ল্যাব চালায়। এসব কারখানায় প্রতি মাসে ৩ থেকে ৫ কোটি ইয়াবা তৈরি হয়। পাশাপাশি শান ও কাচিন রাজ্যের পোস্ত থেকে হেরোইনও বানানো হয়। এটি কোনো ছোটখাটো তহবিল নয়, বরং কার্টেল-স্তরের শিল্পভিত্তিক মাদক ব্যবসা।

তাদের চোরাচালানের রুট ছড়িয়ে আছে পুরো অঞ্চলে:

নাফ নদী হয়ে বাংলাদেশ

মিজোরাম ও মণিপুর হয়ে ভারত

আন্দামান সাগর হয়ে মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া

শান রাজ্য হয়ে থাইল্যান্ড, লাওস ও চীন

এসব রুট এমন এক মাফিয়াচক্রকে শক্তিশালী করছে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে অস্থিতিশীল করছে। সম্প্রতি বড় বড় অভিযানে ধরা পড়া চালানও প্রকৃত পরিসরের সামান্য অংশ। যেমন, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে মাত্র তিন দিনে ৮১ মিলিয়ন ডলারের মাদক ধরা পড়ে, যা আসলে বাজারে প্রবেশ করা মোট মাদকের মাত্র ৫ শতাংশ।

এএ-র মাদক সন্ত্রাসের উপর কিছু অকাট্য প্রমাণ

এএ-এর অপরাধের রেকর্ড বহু বছর ধরেই প্রমাণিত:

ডিসেম্বর ২০২৩: ২.০৭ টন ক্রিস্টাল মেথ ও ৮০০ কেজি অবৈধ ক্যাফেইন এএ-সম্পৃক্ত চোরাকারবারিদের কাছ থেকে উদ্ধার; মূল্য ২৪ মিলিয়ন ডলার।

ইয়াঙ্গুন ২০২৩: পুলিশ এএ-এর গুদাম থেকে ৩,০২৫ কেজি ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করে; মূল্য ৩৬ মিলিয়ন ডলার।

২০১৮ (রাখাইন): ৬৯ লাখ ইয়াবা উদ্ধার হয়, যার বাজারমূল্য ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। সরাসরি এএ কর্মকর্তারা এতে জড়িত।

২০১৯: ২৫ লাখ ইয়াবা, হ্যান্ড গ্রেনেড, ল্যান্ডমাইন ও এএ-এর যোগাযোগ সরঞ্জাম ধরা পড়ে। এখানে স্পষ্ট হয় মাদক, অস্ত্র ও সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র।
এএ প্রতিবছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে, যা হুন্ডি, স্বর্ণ ব্যবসা ও কালোবাজারের মাধ্যমে সাদা করা হয়।

মাদকচালিত গণহত্যা

এএ শুধু মাদক নয়, রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতনও চালাচ্ছে। যারা ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়েছিল, এখন তারা এএ-র নিপীড়নের শিকার। শরণার্থী ও তরুণদের জোর করে মাদক বহনে ব্যবহার করা হয়। তাদের শরীরে, মালপত্রে কিংবা ত্রাণের আড়ালে ইয়াবা পাচার করতে বাধ্য করা হয়। শরণার্থী শিবিরগুলো চোরাচালানের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।

অনেক পরিবারকে ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। চেকপোস্ট বসিয়ে তাদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আর এসব মাদকের অর্থ দিয়ে অস্ত্র নয়, বরং গণহত্যার যন্ত্র সচল রাখা হচ্ছে, যার লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের নিজভূমি থেকে মুছে ফেলা।

কার্টেলের প্রধান: তুন মিয়াত নাইং

এএ-র শীর্ষে রয়েছে তুন মিয়াত নাইং, যাকে আরাকান আর্মির কমান্ডার বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে সে কোনো বিপ্লবী নয়, বরং এক কার্টেল-প্রধান। তার নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে মাদক, চাঁদাবাজি ও রক্তের ওপর দাঁড়ানো এক সাম্রাজ্য।

আরাকান আর্মি কোনো স্বাধীনতা আন্দোলন নয়, বরং এক মাফিয়া-সদৃশ হাইব্রিড শক্তি। যার নেশা ক্ষমতা, যার জ্বালানি মাদক, আর যার ভিত্তি জাতিগত নিধন। এটি এশিয়াকে অস্থিতিশীল করছে, দুর্বলদের দাসে পরিণত করছে এবং প্রতিরোধের ছদ্মবেশে গণহত্যাকে আড়াল করছে।