মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আফগানিস্তানে বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চাচ্ছে ট্রাম্প

আফগানিস্তানে বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চাচ্ছে ট্রাম্প
আফগানিস্তানে বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চাচ্ছে ট্রাম্প। ছবি : আল জাজিরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।

বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের বাকিংহামশায়ারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, চীনের কাছাকাছি হওয়ায় বাগরামের অবস্থান কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার দাবি, ঘাঁটিটি চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কেন্দ্র থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে। এ কথা তিনি গত মার্চ মাসেও উল্লেখ করেছিলেন।

বাইডেন প্রশাসনের আমলে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারকে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’ বলে সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ছাড়লেও বাগরাম ঘাঁটি রেখে দেওয়া উচিত ছিল।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমরা বিনা মূল্যে ঘাঁটিটি দিয়ে দিয়েছিলাম, এখন সেটি ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ তাদের আমাদের কাছ থেকে কিছু লাগবে।’ তিনি ইঙ্গিত দেন, তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের মতো উপায় ওয়াশিংটনের হাতে রয়েছে।

ট্রাম্প কোনো চুক্তি কীভাবে হবে বা কার সঙ্গে হবে—সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি। তালেবানের নামও তিনি মুখে আনেননি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানানো তিনজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বলেন, কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প নীরবে জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যেন তারা তালেবানের কাছ থেকে বাগরাম ঘাঁটি ফেরত আনার উপায় খুঁজে বের করেন।

বাগরাম ঘাঁটির গুরুত্ব

সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটিকে ফের যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার আলোচনা গত মার্চ থেকেই শুরু হয়েছে। ট্রাম্প ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা মনে করেন, ঘাঁটিটি একাধিক কারণে অপরিহার্য—চীনকে নজরদারিতে রাখা (যার সীমান্ত এখান থেকে ৫০০ মাইল বা ৮০৫ কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে), আফগানিস্তানের বিরল খনিজে প্রবেশাধিকার, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা, এমনকি কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালু করার সুযোগ তৈরি।

তবে এসব বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি দরকার হবে বলে জানায় একটি সূত্র। অথচ ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিলেন, সেখানে মার্কিন সেনাদের পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্ত ছিল।

তালেবান আসলে ঘাঁটি ছাড়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসেছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

সোভিয়েত ইউনিয়নের নির্মিত এই বিমানবন্দরটি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের প্রধান ঘাঁটি ছিল। ২০২১ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী পুরোপুরি বাগরাম ছাড়ে। এরপরই ঘাঁটিটি চলে যায় তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।

প্রায় দুই দশক ধরে এ ঘাঁটিই ছিল আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক শক্তির কেন্দ্র। দুই মাইল দীর্ঘ রানওয়ে থেকে দেশজুড়ে অভিযান পরিচালিত হতো। পণ্যবাহী বিমান, যুদ্ধবিমান ও আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টারের জন্য আলাদা আলাদা জায়গা ছিল সেখানে। দায়িত্বকালীন সময়ে ঘাঁটিটি সফর করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁরা সবাই আফগানিস্তানে বিজয় ও উন্নত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

তবে বারবারই তালেবানের হামলার শিকার হয়েছে এ ঘাঁটি—আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে শুরু করে রকেট হামলাও চালানো হয়েছিল এখানে।

২০২১ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি ছাড়ার সময় সি-১৭ মডেলের প্রায় ৯০০টি পরিবহন বিমানের সমপরিমাণ সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয় এবং প্রায় ১৬ হাজার সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়। সে সময় এ তথ্য জানিয়েছিল মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড।

২০২৩ সালে এক পর্যালোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাগরাম ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার অন্যতম কারণ ছিল। এর ফলে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরই হয়ে ওঠে সম্ভাব্য ‘অযুদ্ধকালীন উদ্ধার অভিযানের একমাত্র পথ’।

প্রায়ই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই প্রত্যাহারের ধরণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়, কিন্তু তা সম্পন্ন হয় ২০২১ সালের আগস্টে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে।

গত সপ্তাহে তালেবান জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আফগানিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা করেছে।

হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। তবে কাবুল জানিয়েছে, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি মার্কিন বন্দিবিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাডাম বোলারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা হয়।