মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

পুরো গাজা দখল করে নিলেও হামাসকে হারানো সম্ভব না

ইসরায়েলি সেনা প্রধান ইয়াল জামির। ছবি: আল জাজিরা
ইসরায়েলি সেনা প্রধান ইয়াল জামির। ছবি: আল জাজিরা

গাজা শহর দখল করলেও হামাসকে সামরিক বা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলি সেনা প্রধান ইয়াল জামির। ইসরায়েলের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 12-এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আহ্বানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জামির এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে গাজায় সামরিক অভিযান, বাস্তুচ্যুতি, রাজনৈতিক কৌশল ও জিম্মিদের মুক্তি ও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

চ্যানেল ১২–এর উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, জামির যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলেও তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজা শহর দখল করলেও হামাসকে পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হবে না। সেনা সূত্রের হিসাব অনুযায়ী শহর দখল করতে প্রায় ছয় মাস লাগতে পারে এবং পুরোপুরি ‘পরিষ্কার’ করতে আরও বেশি সময় লাগবে।

বৈঠকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তীব্র স্থল অভিযান ও পুরোনো আবাসিক এলাকা ধ্বংসের ফলে জিম্মিদের জীবন ব্যপক ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় অভিযান আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো আগের মতোই নিয়মিত উদ্বেগ জানিয়ে আসছেন যে, ব্যাপক স্থল অভিযান ও বসতি ধ্বংসের ফলে সাধারণ নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক সুরক্ষা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সেনাপ্রধান ইয়াল জামির রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সতর্ক করেছেন যে গাজা শহরে সেনারা যে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাতে কোনো পূর্ণাঙ্গ নিষ্পত্তি আসবে না।

জামির বলেছেন, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রত্যাশা এক করার জন্যই তিনি এ অবস্থান নিয়েছেন। একটি বৈঠকে তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পেতে হলে গাজার অন্যান্য এলাকায়, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় শরণার্থী শিবিরগুলোতেও অভিযান চালাতে হবে। তবে এতে এমন বেসামরিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে, যা ইসরায়েলি সেনারা নিতে চাইছে না।

একই সময়ে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রোববারের নিরাপত্তা বৈঠকে জোর দিয়ে বলেন, নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী অভিযান শুরু করতেই হবে।

এর আগে, গত ৮ আগস্ট ইসরায়েলি সরকার নেতানিয়াহুর প্রস্তাবিত একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করে। সেই পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে পুরো গাজা দখলের কথা বলা হয়েছে, যার শুরু হবে গাজা শহর দিয়ে।

সরকারিভাবে ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ইসরায়েলি সেনারা ‘গিডিয়নের রথ ২’ নামে নতুন সামরিক অভিযান শুরু করেছে। পুরো গাজা শহর দখল করাই এর লক্ষ্য। তবে এ উদ্যোগ ইসরায়েলের ভেতরে সমালোচনা ও প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে।

মার্কিন সমর্থনে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় হামলা চালিয়ে আসছে। এতে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৮৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক লাখ ৬৪ হাজার ৬১০ জন। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। খাদ্যসংকট থেকে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৪২২ জন, এর মধ্যে ১৪৫ জন শিশু।