মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

দিল্লিতে এস আলম-শেখ হাসিনার বৈঠক, বাংলাদেশ নিয়ে যড়যন্ত্র

এ সময় তার সাথে দেখা করেন পলাতক সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ অনেকে।
ছবি ; এআই
ছবি ; এআই

সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বড় ধরনের অস্থিরতার সংকেত মিলেছে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ব্যাংক লুট ও অর্থপাচারে অভিযুক্ত সাইফুল আলম মাসুদ দিল্লিতে পলাতক শেখ হাসিনার সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফেরানো।

উমরাহ সফরের আড়ালে রাজনৈতিক এজেন্ডা

২ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে সাইফুল আলম মাসুদ উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যান। একদিন পর, ৩ আগস্ট তিনি মক্কার ক্লক টাওয়ারের ফেয়ারমন্ট হোটেলে উঠেন। তবে তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল দেশের বাইরে পালানো আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক।

সূত্রের বরাতে জানা গেছে, পবিত্র উমরাহ পালনের আড়ালে সাইফুল আলম মাসুদ মক্কায় পলাতক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়াও, তিনি দেশ থেকে পাচার করা অর্থে মক্কায় একটি বিলাসবহুল হোটেল কেনার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেন।

৪–৫ আগস্ট তিনি মদিনায় ‘ইলাফ আল তাকওয়া’ হোটেলে অবস্থান করেন। সেখানে চট্টগ্রামের কিছু নির্বাচিত আওয়ামী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করে দেশবিরোধী নানা পরিকল্পনা সাজান।

ছয় আগষ্ট তিনি দুবাই যান।

দুবাইয়ে কোনো রকম বিলম্ব না করে ৬ আগস্টেই বিশেষ ফ্লাইটে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে পৌঁছান এস আলম। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দিল্লি সফরে তার সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তাদের ছোট ছেলে ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক একজন চেয়ারম্যান। দিল্লিতে নেমে তারা উঠেন ভারতের বিখ্যাত পাঁচ তারকা হোটেল দি ওবেরই নিউ দিল্লিতে আর সেখান থেকে শুরু হয় এস আলমের এই সফরের মূল এজেন্ডা।

এ সময় তার সাথে দেখা করেন পলাতক সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোহাম্মদ আলী আরাফাতসহ অনেকে। মূলত দেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনা হয় তাদের মধ্যে।

দিল্লিতে গোপন বৈঠক

এস আলমের দিল্লি সফরের মূল এজেন্ডা ছিল পলাতক শেখ হাসিনার সাথে গোপন বৈঠক। ৮ আগস্ট দুপুরে হোটেলে এস আলম তার সব ফোন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস রেখে একটি নম্বরপ্লেটহীন গাড়িতে রওনা করেন। আর পথে দুই-দুইবার পরিবর্তন করা হয় তাকে বহন করা গাড়ি। অবশেষে তাকে বহনকারী গাড়িটি পৌঁছায় Lutyens Bungalwo Zone-LBZ-এ অবস্থিত হাসিনার বাসভবনে।

সেখানে তিনি দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত অবস্থান করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভারতের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বৈঠকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে এস আলমের কাছে চার হাজার পাঁচশত কোটি টাকা দাবি করেন। এস আলম এই পরিমাণ অর্থ প্রদানে সম্মত হন।

অর্থের ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার

চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই অর্থ নিম্নলিখিত কাজে ব্যয় করা হবে:

  1. আন্তর্জাতিক লবি এবং বিভিন্ন দেশের পলিসি মেকারদের আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার জন্য ব্যবস্থাপনা।
  2. নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করা।
  3. সরকারি আমলা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘কেনা’।
  4. আওয়ামী নেতাকর্মীদের জামিনের জন্য ব্যয়।
  5. এস আলমের সুগার রিফাইনারি ও অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগঠন করা।

এই অর্থ গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য তিনজন কমিটি গঠিত হয়েছে: জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

পরবর্তী বৈঠক ও কার্যক্রম

দিল্লি থেকে ফেরার পর এস আলম হোটেল দি ওবেরই নিউ দিল্লিতে অবস্থান করে, ভারতে পালানো কেন্দ্রীয় আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেন। ১০ আগস্ট আবারও শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে দেখা করেন, ২,৫০০ কোটি টাকা সরবরাহ করেন এবং বাকি দুই হাজার কোটি টাকা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

১১–১৫ আগস্ট মুম্বাইয়ে Kokilaben Dhirubhai Ambani Hospital-এ স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৬ আগস্ট দিল্লিতে শেষবারের মতো শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে নতুন করে দেশবিরোধী নানা পরিকল্পনা সাজান। সবশেষে ১৭ আগস্ট সফর শেষ করে এস আলম সিঙ্গাপুরে ফেরেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এস আলমের এই সফর এবং বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। জনগণের অর্থ লুণ্ঠন করে তা বিদেশে পাচার এবং দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কাজে ব্যবহার কোনো সাধারণ ঘটনা নয়।

এক্ষেত্রে সতর্ক দৃষ্টি, সচেতনতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর পদক্ষেপ অপরিহার্য।

এক নজরে এস আলমের সফরসূচি

২ আগস্ট ২০২৫: সৌদি আরব (মক্কা) – উমরাহ পালনের আড়ালে পলাতক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক, হোটেল কেনার পরিকল্পনা।

৪–৫ আগস্ট ২০২৫: মদিনা – Elaf Al Taqwa হোটেল, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা।

৬ আগস্ট ২০২৫: দুবাই থেকে দিল্লি – হোটেল দি ওবেরেই, কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক।

৮ আগস্ট ২০২৫: দিল্লি, লুটিয়েন্স বাঙলো জোন – শেখ হাসিনার সঙ্গে ৫ ঘণ্টার বৈঠক, ৪,৫০০ কোটি টাকা অঙ্গীকার।

১০ আগস্ট ২০২৫: শেখ হাসিনার বাসভবন – দ্বিতীয় বৈঠক, ২,৫০০ কোটি টাকা সরবরাহ।

১১–১৫ আগস্ট ২০২৫: মুম্বাই – স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

১৬ আগস্ট ২০২৫: দিল্লি – শেষ বৈঠক, নতুন অস্থিতিশীলতার পরিকল্পনা।

১৭ আগস্ট ২০২৫: সিঙ্গাপুর – সফর সমাপ্তি।

সূত্র: নয়া দিগন্ত

আরো পড়ুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন