গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো। এ সময় আংশিক বন্দি বিনিময়ের কথা থাকলেও ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান জানায়নি।
আল জাজিরার সাংবাদিক তামের মিসহালের তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবের আওতায় জীবিত ১০ জন ইসরায়েলি বন্দি ও ১৮ জনের লাশের বিনিময়ে ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে থাকবেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৪৫ জন এবং দীর্ঘ মেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত আরও ১৫ জন।
গত তিন দিন ধরে কায়রোতে হওয়া আলোচনায় হামাসের উদ্যোগেই সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী একসঙ্গে অংশ নেয়। তাদের লক্ষ্য ছিল আলোচনায় ঐক্য বজায় রাখা এবং গাজার জনগণকে বিপদের মুখে ফেলার দায় নিজেদের কাঁধে না নেওয়া।
প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই ৮ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি পাবে। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ থাকবে ৬০ দিন। এই সময়ের মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলবে। যুদ্ধবিরতির ৫০তম দিনে আরও ২ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। নিহত ইসরায়েলিদের লাশও ধাপে ধাপে হস্তান্তর করা হবে।
যে ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনির মুক্তির কথা বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ জনই গাজার বাসিন্দা, যাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক করেছিল ইসরায়েল।
হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছে শর্ত দিয়েছে—প্রথমে ইসরায়েলের সম্মতি নিশ্চিত করতে হবে, তারপর তারা আনুষ্ঠানিক সাড়া দেবে। তবে মধ্যস্থতাকারীরা হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে আশ্বস্ত করেছেন, তাঁরা এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে কাজ চালিয়ে যাবেন।
চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি সেনাদের সীমান্ত থেকে এক হাজার মিটার এবং জনবসতি থেকে অন্তত ১ হাজার ২০০ মিটার পিছিয়ে যেতে হবে, যাতে উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় ত্রাণ সহজে পৌঁছানো যায়। তবে বেইত হানুন ও শুজাইয়ার মতো কিছু এলাকায় সেনারা ১ হাজার ২০০ মিটার দূরত্বেই থাকবে। হামাস এ শর্ত মেনে নিয়েছে, কারণ গাজার জনগণ ভয়াবহ ক্ষুধার মধ্যে আছে।
মধ্যস্থতাকারীরা আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর স্থায়ী সমাধান না হলেও যেন লড়াই নতুন করে শুরু না হয়। যদিও এ বিষয়টি মূল চুক্তির অংশ নয়।
আল জাজিরাকে দেওয়া এক সূত্রের ভাষ্য, গাজার সাধারণ মানুষকে আবারও যুদ্ধে ঠেলে না দিতে এটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান। অন্তত ৬০ দিনের জন্য লড়াই বন্ধ থাকবে, সেনারা কিছুটা পিছিয়ে যাবে এবং ত্রাণ ঢোকার সুযোগ তৈরি হবে।
তবে ইসরায়েল এখনো প্রস্তাবটি গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেনি। এদিকে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়ালা নিউজ জানিয়েছে, প্রায় ৮০ হাজার সেনা গাজা শহর দখল অভিযানে অংশ নেবে। এক সামরিক কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, গাজা শহর দখলের প্রচেষ্টা হবে ব্যাপক ও ঝুঁকিপূর্ণ, এতে ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম জানায়, সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইতিমধ্যে গাজা শহর দখলের পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন।
সূত্র: আল জাজিরা











