মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

তালেবানের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের তাড়া করছে ইরান

তালেবান ইরানের কাছে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে।
ফাইল ছবি : আমু
ফাইল ছবি : আমু

ব্রিটিশ দৈনিক টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ইরান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহভাজনদের খোঁজে অভিযান শুরু করেছে। এ জন্য তারা ব্যবহার করছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁস হওয়া একটি তালিকা, যা তালেবান ইরানের হাতে তুলে দিয়েছে।

খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহে রেভল্যুশনারি গার্ডের চারজন শীর্ষ কর্মকর্তা আফগান রাজধানী কাবুলে গিয়ে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই চুক্তির লক্ষ্য ফাঁস হওয়া একটি ডাটাবেস ব্যবহার করা, যেখানে রয়েছেন এমন আফগান নাগরিকেরা যারা ব্রিটেনে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে আছেন সাবেক সেনাসদস্য, যারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছেন, এমনকি বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন।

ইরানি কর্মকর্তারা চান এই তালিকা ব্যবহার করে সন্দেহভাজন গুপ্তচরদের আটক করতে, যাতে তাঁদের পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনায়—বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দরকষাকষিতে—চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানো যায়।

টেলিগ্রাফের তথ্যমতে, তালিকাভুক্তদের কিছু অংশ তালেবানের প্রতিশোধের ভয়ে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর ইরানে পালিয়ে এসেছিলেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরানি সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাঁদের কয়েকজনকে আটকও করেছে।

তদন্তে দেখা গেছে, আটক হওয়া কয়েকজন শুধু সাবেক আফগান সেনা ছিলেন। তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হলেও, আরও কয়েকজন এখনো আটক রয়েছেন এবং তাঁদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

তালেবানের লাভ

অন্যদিকে, তালেবান ইরানের কাছে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে তারা ওই তালিকার একটি ‘পরিমার্জিত’ সংস্করণ ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে তালেবানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা ব্রিটিশ টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে বলেন, ইরান যদি তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়, সেটি তাদের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যদিও তালেবানের ভেতরে কিছু অংশ ইরানের সঙ্গে সহযোগিতার বিরোধিতা করেছে। তাদের যুক্তি ছিল, তেহরান আফগান শরণার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তাদের আফগানিস্তানে ফিরত পাঠিয়ে দিচ্ছে।

আফগান সরকারের উপ মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাত বলেছেন ব্রিটিশ সূত্র থেকে ফাঁস হওয়া নথি ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তাঁর দাবি, আফগান প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যেই পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড রাখা আছে, তাই ব্রিটিশ সূত্র থেকে আসা নথির প্রয়োজন নেই।

ব্রিটিশ তথ্য ফাঁস

প্রায় এক মাস আগে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছিল, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০২২ সালে তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ১০০ জনেরও বেশি ব্রিটিশ নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ হয়ে যায়। এদের মধ্যে গুপ্তচর এবং বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। বিবিসি ও আরও কয়েকটি মাধ্যম জানায়, ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই–৬–এর সদস্যদের নাম ও ব্যক্তিগত তথ্য, সেই সঙ্গে এসএএস–এর মতো বিশেষ বাহিনীর সৈন্যদের তথ্যও।

এই ফাঁসের পর তৎকালীন কনজারভেটিভ সরকার একটি গোপন কর্মসূচি চালু করে। এর আওতায় ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ১৬ হাজারের বেশি আফগানকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ কর্মসূচির খরচ হয়েছিল প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ২.৬ বিলিয়ন ডলার)।

ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি ২০২২ সালে ঘটানো ওই তথ্য ফাঁসের জন্য ক্ষমা চান। তিনি স্বীকার করেন, নথিগুলোর মধ্যে এমনকি সংসদ সদস্যদের নামও ছিল, যাঁরা আফগান সহযোগীদের সহায়তা করেছিলেন, আর ছিলেন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা, যারা আফগানদের ব্রিটেনে আশ্রয় পেতে সহায়তা করেছিলেন।

টেলিগ্রাফ আরও জানায়, ওই ফাঁসের পর লন্ডন গোপনে প্রায় ২৪ হাজার আফগান সেনা ও তাঁদের পরিবারকে আশ্রয়ের প্রস্তাব দেয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় আফগান সরকার জানায়, তারা ব্রিটিশ গোপন কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো আফগানকে আটক বা নজরদারিতে নেয়নি।

উল্লেখ্য, তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন, গত দুই দশক ধরে পশ্চিমা বাহিনী বা আগের সরকারে কাজ করা আফগানদের সাধারণ ক্ষমা করা হবে।

সূত্র: আল জাজিরা