আমাদের অনেকের নিশ্চয়ই এখনো মনে আছে—২০১৭ সালের আগস্টের শেষদিকে, নতুন করে এসে পৌঁছানো নির্যাতিত রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে আমরা কেমন আবেগ আর দরদ নিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়। আগুনে ঝলসানো শরীর,ছিন্নভিন্ন কাদামাখা পোশাক আর আতঙ্কে কাঁপতে থাকা নিষ্পাপ শিশুর দিকে তাকিয়ে আমরাও কেঁপে উঠেছিলাম বেদনায়, কিছু করতে না পারার অনুশোচনায়।
সময় গড়িয়েছে। অনেক কিছু বদলে গেছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্বপ্নের বাস্তবতা বদলায়নি। সেদিন আশ্রয় নেয়া লাখো মানুষ, ঠিক আগের মতোই আজও শিকড়ছিন্ন, উদ্বাস্তু। দুনিয়া সে সময় দেখেছিল তাদের উপর চলা বর্বরতা—পুড়ে যাওয়া গ্রাম, নদীর পাড়ে পড়ে থাকা সারি সারি গলিত লাশ, ছোট ছোট নিষ্পাপ শিশুদের কান্না। কিছু সময়ের জন্য মুসলিম দুনিয়াও সাড়া দিয়েছিল—প্রতিবাদ হয়েছিল অল্প সময়ের জন্যে।
অথচ আজও—২০২৫ সালের এই সময়ে—এই একই জাতির উপর নিত্যদিনই চলছে ধারাবাহিক ত্রিমুখী জুলুম ও নিপীড়ন। কিন্তু এবার, চারপাশে কোন শব্দ নেই, দৌড়ঝাঁপ নেই, কিছু করার চেষ্টা ,আগ্রহ কিংবা করতে না পারার অনুশোচনা নেই।
মিডিয়া আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মুসলিমরা বেবাক সব ভুলে গেছে হাজার বছরের পুরনো কাহিনির মতো। অথচ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আবারও অন্তত ২,৫০০-এরও বেশে রোহিঙ্গা মুসলিম শহিদ হয়েছে। নদী, মাঠ, রাস্তার পাশে অন্তত ২০০ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে— নির্যাতনের চিহ্নসহ, কোন কোন মরদেহ ছিলো মাথাবিহীন। অথবা পচে যাওয়া গলিত, পরিচয়বিহীন।
এপ্রিলে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যাবধানে আরাকানের বুথিডং শহরে ৪৫ টির বেশি রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রায় এক লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়ে ঘরছাড়া হয়েছে। কিন্তু মাজলুমের বুকফাটা চিৎকার আমাদের নির্মম নীরবতা ভাঙতে পারেনি ।
চলমান গণহত্যার পেছনে এবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী নেই। এর পেছনে আরাকান আর্মি—একটি বৌদ্ধ সন্ত্রাসী সশস্ত্র গোষ্ঠী, যাদের একমাত্র লক্ষই হল আরাকানে রয়ে যাওয়া বাকি রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করে আরাকানকে রোহিঙ্গাশূন্য করা।
রোহিঙ্গা শিশুরা বন্দি অবস্থায় মারা যাচ্ছে, নারীদের ওপর চলছে নৃশংস নিপীড়ন, অথচ এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল অনেকটাই নীরব। মুসলিম দেশগুলো থেকেও তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, আর তাদের পাশেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলিমরাও বেমালুম ভুলে গেছে তাদের মজলুম ভাইদের কথা।
গণহত্যা কিন্তু থেমে যায়নি। শুধু রূপ বদলেছে। আমাদের নীরবতাই সবচেয়ে স্পষ্ট সংকেত—এটা আর কারো আগ্রহের বিষয় নয়।
গণহত্যা কখনো বন্ধ ছিল না
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল, সেটাই আজ চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। গত ছয় মাসে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও হত্যা করে নদী, জঙ্গল আর ধানক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। যেন বাকি রোহিঙ্গারাও আরাকান ছেড়ে দেয়।
২০২৪ সালের ৫-৬ আগস্ট, কাইন চং আর লাম্বাগুনা এলাকার পাশে যখন লোকজন নাফ নদী পেরিয়ে পালাতে চাইছিল, তখনই আক্রমণ করে সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি। ড্রোন হামলা আর গুলির মুখে নদীর পাড় রূপ নেয় এক মৃত্যুপুরীতে। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় শহিদ হন দুই শতাধিক মানুষ। স্যাটেলাইট চিত্রে আগুনে পোড়া এলাকা আর ভারী অস্ত্রের ব্যবহারের চিহ্ন স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মার্চ ও এপ্রিল মাসে থিংডাউলি ও বুথিডংয়ের (ব্লক ৪) কাছে একাধিক মাথাবিহীন রোহিঙ্গার মরদেহ পাওয়া যায়—কিছু রশিতে বাঁধা, কিছু প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায়। স্থানীয় রোহিঙ্গারা নিশ্চিত করেন, এগুলো সন্ত্রাসী আরাকান আর্মিই করেছে।
নির্যাতন এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। পরিত্যক্ত স্কুল আর সামরিক ঘাঁটিকে বন্দিশিবিরে পরিণত করেছে আরাকান আর্মি। সেখানে কিশোর থেকে যুবকদের মাসের পর মাস শিকলে বেঁধে রাখা হয়, দিনে একবার খাবার দেয়া হয়, তার উপর চলে নির্মম মারধর, পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ। পাঁচ বছরের এক শিশু, ফাতিমা, ডায়রিয়া হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায় এই সন্ত্রাসীদের বন্দিশিবিরে।
অথচ আমরা মানবতার মুখোশ পরে মূলত নীরবতাই পালন করে যাচ্ছি আর ভাবছি সবকিছু বদলে গেছে। কোথাও কিছু ঘটছে না।
ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রোহিঙ্গারা, আসবে কি কেউ ? ”
২০১৭-এর পর সবাই বলেছিল, অপেক্ষা করো। আন্তর্জাতিক আইনের জন্য, আদালতের জন্য, প্রস্তাবনার জন্য। বলেছিল, ন্যায়বিচারের জন্য সময় লাগবে।
আমরাও অপেক্ষা করেছি।
আমরা অপেক্ষা করেছি যখন মিয়ানমারের জেনারেলরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছে, যখন বিশ্ব ‘গণহত্যা’ শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক করেছে, আর কূটনীতিকরা খালি খাতা আর ভরা ক্যামেরা নিয়ে ক্যাম্প ঘুরে ফিরে গেছেন। কিন্তু কোনো আদালত বুথিডাংয়ে পৌঁছায়নি। কোনো বিচারক সেই মসজিদের সামনে দাঁড়ায়নি যেখানে আগুন দেওয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, তার জন্য আজ পর্যন্ত একজন মানুষকেও জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়নি—না মিয়ানমারে, না হেগ-এ।
এখন ২০২৫। আমরা এখনো অপেক্ষায়।
শুধু এবার যারা হত্যা করছে, তারা নতুন মুখ—আরাকান আর্মি। একসময় যাদের ‘বিদ্রোহী বাহিনী’ হিসেবে প্রশংসা করা হতো। তাদের বিরুদ্ধেও কোনো তদন্ত হয়নি। কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কোনো বিচারও হয়নি। তারা যখন রোহিঙ্গা যুবকদের গলা কেটে নদীতে ফেলে দিল, তখন কোনো সংবাদ সম্মেলন হয়নি। তারা যখন স্কুলগুলোকে কারাগারে পরিণত করে শিশুদের নির্যাতন করল, তখনও তাদের কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি। আর যখন ২০২৫ সালের এপ্রিল ও মে মাসে আমাদের ঘরবাড়ি আবার পুড়িয়ে দিলো, তখন কেউ মুখ খুলে নি।
আমরা আমাদের মৃতদের নিঃশব্দে দাফন করেছি। নাম আর তারিখ সংরক্ষণ করেছি, আর প্রতিবারের নীরবতায় আমরা বুঝেছি—আমাদের রক্তের কোনো দাম নেই।

২০২৪–২০২৫: আরাকানের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গা গণহত্যার প্রামাণ্য চিত্র
- ৫-৬ আগস্ট ২০২৪ : নাফ নদী হত্যাকাণ্ড (মংডু)
কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের দিকে আসার সময় সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি (AA) তাদের টার্গেট করে ড্রোন ও মর্টার হামলা চালায়। এতে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ জন রোহিঙ্গা শহিদ হয়। নদীর পাড় ও ধানক্ষেতে লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্যাটেলাইট ছবি ও ভিডিও প্রমাণ সন্ত্রাসী আরাকানর আর্মির সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করে।
( সূত্র: HRW, The Diplomat, আল জাজিরা )
- ১৭ মে ২০২৪ : বুথিডং শহরে আগুন
বুথিডাং শহর দখলের পর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির সদস্যরা রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দেয়। এতে প্রায় ১,৫০০ ঘরবাড়ি পুড়ে যায়; অন্তত ৪৫ জন শহিদ ও হাজারো পরিবার ঘরছাড়া হয়। জাতিসংঘ বলছে: ‘বুথিডং শহরের বড় অংশই পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।’
(সূত্র: Reuters, Al Jazeera, OHCHR)
- ১৭ এপ্রিল ২০২৪ : পাঁচ গ্রামবাসীকে হত্যা (মংডু):
আবুজা গ্রামের পাঁচজন রোহিঙ্গাকে তুলে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এক সপ্তাহ পর তাদের লাশ পাশের পুকুরে পাওয়া যায়—চারজনেরই মাথা কাটা ছিল। ভিডিও ফুটেজে লাশ দেখা যায়; জাতিসংঘের রিপোর্টে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়।
- অগাস্ট ২০২৪ (শেষ সপ্তাহ) : ঘরে ঢুকে হত্যা:
সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির সদস্যরা রাতের আঁধারে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে ঢুকে কয়েকটি পরিবারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। বেঁচে থাকা একজন ব্যক্তি জানান, ‘আমার চোখের সামনে আমার মা, স্ত্রী ও সন্তানদের জবাই করে ফেলে।’ (সূত্র: The New Humanitarian)
- রমজান ২০২৫ : বুথিডংয়ে গলা কাটা লাশ ও গণকবর
একজন রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ করে হত্যা করা হয়; দুই মাস পর তার ভাইসহ আরও ১২ জনের পঁচা লাশ একটি মাঠে পাওয়া যায়। সকলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন; মুখমণ্ডল ফোলা ও রক্তাক্ত ছিল। গ্রামের মানুষকে বলা হয়—‘বো গ্যি চং গ্রামে লাশ আছে, গিয়ে নিয়ে আসো।’
Rights group মন্তব্য করে, ‘রোহিঙ্গা বেসামরিকদের উপর এ ধরনের হামলা ছিল বিচারবহির্ভূত এবং অতি মাত্রায় সহিংস।’
জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার বহু অংশ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
আটক, নির্যাতন এবং ‘নিখোঁজ হয়ে যাওয়া’ : আরাকান আর্মির গোপন বন্দিশিবির
২০২৪-২৫ সালের মধ্যে উত্তর আরাকানে আরাকান আর্মি (AA) একাধিক অস্থায়ী বন্দিশিবির স্থাপন করেছে। এসব বন্দিশিবিরে রোহিঙ্গাদের বিনা বিচারে আটক রাখা, নির্যাতন করা, এমনকি হেফাজতে হত্যা করার অভিযোগ ব্যাপকভাবে পাওয়া গেছে। এগুলো সাধারণত পরিত্যক্ত স্কুল, গ্রামীণ প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ পোস্ট এবং আরাকান আর্মির ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত ভবনগুলোর ভিতরেই গড়ে তোলা হয়েছে।
- বুথিডং টাউনশিপের জাম্বোনিয়া গ্রামে অবস্থিত ‘১০ নম্বর ব্যাটালিয়ন’ এবং মংডুর ‘হাই স্কুল নং ৩’—এই দুটি স্থান নির্দিষ্টভাবে বন্দিশিবির হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
- বন্দিদের সাধারণভাবে পা-শিকলে বাঁধা অবস্থায় অন্ধকার, ভেজা ও দুর্গন্ধযুক্ত ঘরে রাখা হয়। ২১ বছর বয়সী একজন রোহিঙ্গা জানান: ‘ওখানেপ্রবেশের সাথে সাথেই তারা দুই পা শিকলে বেঁধে দেয়… মাটিতেই শুয়ে থাকতে হতো, কয়েক সপ্তাহ এভাবেই কাটে।’
- আরেকজন বন্দি জানান, ১৮ জনকে একসাথে একটি ছোট ঘরে ৩৫ দিন ধরে রাখা হয়—ঘুমানোর, শোয়ার বা দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকতো, মশার কামড়, প্রস্রাব-পায়খানা সব ঘরের মধ্যেই করতে হতো।
- খাবার হিসেবে ছিল কেবল সামান্য চাল বা আলু-মুড়ি জাতীয় খাদ্য। চিকিৎসাসেবা ছিল না।
নির্যাতনের ধরন ও উদ্দেশ্য
- একটি ঘটনায় ‘আবদুল্লাহ’ নামের একজন জানান, আরাকান আর্মির চারজন সদস্য একসাথে বাঁশ, লোহার তার এবং কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করে। মুখে কাপড় গুজে বেহুঁশ হওয়া পর্যন্ত পেটানো হয়। দেহে এখনও সেই আঘাতের চিহ্ন রয়ে গেছে।
- ‘শফিক’ নামের এক যুবক জানিয়েছেন, জানুয়ারি ২০২৪-এ মসজিদ থেকে তাকে তুলে নিয়ে ১১ মাস বন্দি রাখা হয়। মাঝে মাঝে একটানা দেড় ঘণ্টা পিঠ, তলপেট ও উরুতে বাঁশ দিয়ে মারা হতো। পরে বুথিডং কারাগারে স্থানান্তর করা হলে তিনি সেখানে রাতের বেলা অন্য রোহিঙ্গা বন্দিদের মৃতদেহ সরিয়ে নিতে দেখেন।
মৃত্যু ও গোপন কবর
- জাম্বোনিয়া ঘাঁটিতে সাত মাস ধরে এক বন্দিকে পা-শিকলে আটক রাখা হয়। মৃত্যুর পর শিকল কেটে মৃতদেহ পাহাড়ে গোপনে দাফন করা হয়।
- এক পরিবারের অনুরোধে লাশ ইসলামি নিয়মে দাফনের সুযোগ চাওয়া হলে সন্ত্রাসীরা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং মৃতদেহ ঘাঁটির ভিতরেই কবর দেয়।
- ২০২৫ সালের মাঝামাঝি আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা দুটি শিশু (৫ বছরের কম) ডায়রিয়ায় মারা যায়। পরিবার জানায়, ওষুধ বা পানি চাইলেও গার্ডরা কিছু করেনি।
- বন্দিদের পরিবারকে খাদ্য বা চিকিৎসা পৌঁছাতে দেওয়া হয় না। অধিকাংশ বন্দির খোঁজ দীর্ঘদিন পর্যন্ত পরিবারও পায় না—তাদের ‘নিখোঁজ’ বলেই ধরে নিতে হয়।
- BROUK জানায়, রোহিঙ্গা পুরুষ ও কিশোরদের লক্ষ্য করে আটক, নিপীড়ন ও হত্যা এখন পরিকল্পিত রূপ নিয়েছে।
- নির্যাতন কেন্দ্রে জেরা, অস্বীকারযোগ্য স্বীকারোক্তি আদায়, মুক্তিপণ দাবি বা নিখোঁজ করে দেওয়া—সবকিছুই ‘সন্ত্রাস সৃষ্টির কৌশল’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
শিরচ্ছেদ, অঙ্গচ্ছেদ এবং লাশ ছড়িয়ে রাখার নীতি : সন্ত্রাসের নতুন প্রতিচ্ছবি
রোহিঙ্গাদের উপর সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির (AA) সবচেয়ে ভয়ংকর নির্যাতনের একটি পদ্ধতি —শিরচ্ছেদ, দেহ-মণ্ডল ছিন্ন করা, এবং মৃতদেহগুলো নদী, পুকুর বা নির্জন স্থানে ফেলে রাখা। আল-জাজিরা এবং জাতিসংঘের তদন্তে একাধিক শিরচ্ছেদ ও অঙ্গচ্ছেদের প্রমাণ মিলেছে,। যার থেকে বুঝা যায়, এই বর্বরতা কেবল বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত আতঙ্ক সৃষ্টির কৌশল।
আরাকান আর্মির বর্বরতা শুধু হত্যার মেধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই বরং তারা রোহিঙ্গাদের মাঝে মানসিক আতঙ্ক তৈরি করতে মৃতদেহগুলো এমনভাবে ফেলে রাখে বা লুকিয়ে রাখে, যাতে তা ‘মৃত্যুর চেয়েও আরও নৃশংস’ বার্তা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে দেহ টুকরো করা হয়, মাথা বা অঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এই সেই পদ্ধতি যা ২০১৭ সালে মায়ানমার সেনাবাহিনী অবলম্বন করেছিল—তবে এবার তা করছে তথাকথিত বিদ্রোহী নামের জাতিগত সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি।
যৌন সহিংসতা ও নারী নির্যাতন: নীরবতার আড়ালে আরও এক ভয়ংকর সত্য
আরাকান আর্মির (AA) নৃশংসতার একটি অবহেলিত কিন্তু গুরুতর দিক হলো—রোহিঙ্গা নারীদের ওপর সংঘটিত যৌন সহিংসতা। তথ্য স্বল্প হলেও ( লজ্জা ও প্রতিশোধের ভয়ে অধিকাংশ প্রকাশ্যে আসে না) নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনগুলো এ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০১৭ সালের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণধর্ষণের মতই রোহিঙ্গা নারীরা আরাকান আর্মির দ্বারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে।
- হামিদার ঘটনা : জুলাই ২০২৪, মংডু
২২ বছর বয়সী হামিদা জানান, আরাকান আর্মির সাতজন সদস্য তার ঘরে ঢুকে তাকে বুট দিয়ে লাথি ও রাইফেলের বাঁট দিয়ে মারধর করে। এরপর তারা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। ‘তারা আমাকে অস্ত্র দিয়ে প্রহার করে, ব্যথায় আমি এখনো নড়তে পারি না’ বলেন হামিদা। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা তার স্বামীকে বড় ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। এই পুরো ঘটনা ঘটেছিল ‘আতঙ্ক সৃষ্টির’ অভিযানের অংশ হিসেবে। হামিদা কোনওভাবে বেঁচে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
- মানোয়ারা ও শামসিদার ঘটনা : আগস্ট ২০২৪, নাফ নদী গণহত্যার পর
১৯ বছর বয়সী মানোয়ারা ও তার গর্ভবতী বোন শামসিদা পালানোর পথে AA সেনাদের হাতে পড়ে যান। সেনারা মানোয়ারাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। শামসিদা নদী পার হয়ে বাংলাদেশে পালাতে সক্ষম হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তার সদ্যজাত কন্যা সন্তান মারা যায়—সম্ভবত দৌড়ঝাঁপ, আতঙ্ক ও অপুষ্টির কারণে। পরবর্তীতে তারা কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হন, কিন্তু এখনো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
‘সবাই আমাদের ঘৃণা করে, কিন্তু কেন জানি না। মনে হয় এটা আমাদের অভিশাপ’, বলেন মানোয়ারা। তার এই বক্তব্যই রোহিঙ্গা নারীদের যন্ত্রণা তুলে ধরে—যৌন সহিংসতার পাশাপাশি সমাজের চোখেও তারা ‘অপমানিত’ হয়ে থাকেন নিয়মিত।
- নাফ নদীর সাক্ষ্য , আগস্ট ২০২৪
নাফ নদীর গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া এক রোহিঙ্গা বাবা জানান, তিনি মৃতদেহের নিচে লুকিয়ে থেকে ঘটনার শব্দ শুনছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক নারী বারবার বলছিল, ‘আমার সাথে এটা করবেন না।’… এটি দুই ঘণ্টার মতো চলছিল।’ তিনি শুনতে পান, একজন সৈন্য বলছে, ‘ওর হাত কাটো, স্তন কাটো।’ এরপর গুলির শব্দ হয় এবং সব নিস্তব্ধ। শুধু ধর্ষণ নয়, নারীর দেহাংশ কেটে হত্যা করার পদ্ধতি আতঙ্ক সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে করে থাকে সন্ত্রাসীরা।

ন্যায়বিচার ও নিঃশব্দতা
এই কয়েকটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু নয়—বরং বড় একটি প্যাটার্নের অংশ, যা ২০২৪–২৫ সালে আরাকান আর্মির পরিচালিত অভিযানে দেখা গেছে। BROUK জানায়, ‘আরাকান আর্মি নিয়মিত এমন কর্মকাণ্ড করেছে, যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে—যার মধ্যে ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতাও আছে।’ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ‘এই ধর্ষণগুলো ২০১৭ সালের গণহত্যার ধর্ষণগুলোরই প্রতিরূপ।’
কিন্তু তথ্য সীমিত। কারণ রোহিঙ্গা নারীরা হয়তো প্রতিশোধের ভয়ে চুপ থাকেন, কিংবা লজ্জার কারণে মুখ খোলেন না। অনেকেই হয়তো শহিদ হয়ে গেছেন বা সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ পাননি। অনেক পরিবার শুধু জানে—‘তাদের মেয়ে বা স্ত্রী হঠাৎ হারিয়ে গেছে।’
২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কোনও AA সদস্য রোহিঙ্গা নারী ধর্ষণের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হয়নি। তাদের নেতৃত্ব অস্বীকার করে বা নীরব থাকে। এই দায়হীনতার চক্র এখনও অটুট রয়েছে।
উল্লিখিত কিছু সাহসী স্বীকারোক্তিই প্রমাণ করে, যৌন সহিংসতা এখনো এই সংঘাতে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।
মাজলুমের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কি সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত?
পৃথিবীর নানা প্রান্তে যখন মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হয়, তখন মুসলিম বিশ্ব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়—বিক্ষোভ, অনুদান, প্রতিবাদ, সংবাদমাধ্যমে সরব উপস্থিতি। গাজা, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর—এইসব সংকট নিয়ে সোচ্চার হওয়ার ঘটনা নিয়মিত। যদিও সকল মাজলুমের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া সমান হওয়ার কথা ছিল, সকল মাজলুমরাই আমাদের থেকে সমান সাহায্য পাওয়ার দাবিদার ।
কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিষয়টি যেন ব্যতিক্রম।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়কালে ২,৫০০’র বেশি রোহিঙ্গা শহিদ হয়েছে। অনেক গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, মানুষ গুলি খেয়ে বা পানিতে ডুবে মারা গেছে। নদীর পাড়ে লাশ ভেসে উঠেছে। তা সত্ত্বেও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
প্রমাণের ঘাটতি ছিল না। স্যটেলাইট চিত্র, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, ভিডিও সবই ছিল। কিন্তু এসব কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ২০১৭ সালে যারা ‘উম্মাহ’ বলে আওয়াজ তুলেছিল, তাদের অধিকাংশই ২০২৫ সালে নিশ্চুপ।
একজন রোহিঙ্গা শিক্ষক বলেছিলেন, ‘আমি খবর খুঁজে দেখছিলাম, কেউ কি দেখছে এসব। কিন্তু, কিছুই পেলাম না। মনে হলো, হয়তো কারও চোখে আমাদের আর অস্তিত্ব নেই।’
রোহিঙ্গাদের কি আমরা মুসলিম উম্মাহর অংশ মনে করি ?
কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুসলিমরা পরস্পরের ভাই।’
কিন্তু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে, এই ভ্রাতৃত্ব কোথায় যেন হারিয়ে যায়, যখন সেটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। আমাদের নারীদের জঙ্গলে টেনে নেওয়া হয়েছে, শিশুদের শেকলে বেঁধে মারা হয়েছে, পুরুষদের মাথাবিহীন দেহ পাওয়া গেছে মাঠে। আমরা আপনার অপেক্ষায় ছিলাম ।
আমরা হাদিসে রাসুল সা. পড়ি ও পড়াই —ভাইয়ের কষ্টে কাঁদো, আরেক মুসলমান দুঃখে পড়লে পাশে দাঁড়াও। বলা হয়, শরীরের এক অঙ্গ ব্যথা পেলে পুরো দেহ কাঁপে। কিন্তু বাস্তবে আমরা একা রক্ত ঝরিয়েছি। আমাদের চিৎকারের আওয়াজ পৌঁছায়নি আপনাদের ঘরে, মসজিদে, খুতবায়।
নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন—যদি সেই ধর্ষিতা নারী আপনার বোন হতেন? যদি তার পাশে থাকা মৃতদেহটি আপনার স্বামী হতো? আপনি কি সেই রাত ভুলতে পারতেন? আপনি কি তখনও চুপ থাকতেন?
এটা দান-খয়রাতের বিষয় নয়। এটা ঈমানের প্রশ্ন। সেই ঈমান, যা আমাদেরকে উম্মাহর অংশ হিসেবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
আপনাদের আমাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল—এই কারণে না যে আমরা রোহিঙ্গা, বরং এই কারণে যে আমরা মুসলমান।
রোহিঙ্গাদের ভূমি এখন সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির দখলে
জলুমের পর সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের ভূমি দখল করেছে। গ্রামগুলো খালি হওয়ার পর, সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি এলাকাগুলোর পুনর্গঠন শুরু করে। উত্তর বুথিডং ও মংডুর কিছু অংশকে ‘নিরাপত্তা এলাকা’ ঘোষণা করা হয়—সেখানে আর আগের বাসিন্দারা ফিরতে পারবেন না। নতুন করে বেড়া দেওয়া হয়, চেকপয়েন্ট বসানো হয়। তারপর আসতে শুরু করে নতুন বসতি।
মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদন ও স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাখাইন বৌদ্ধ বসতি স্থাপনকারীরা, প্রায়শই এএ সদস্যদের পাহারায়, রোহিঙ্গাদের ফেলে যাওয়া গ্রামগুলোতে প্রবেশ করে। পরিত্যক্ত ঘরগুলো লুট করে, কিছু ঘর আবার রং করে নেওয়া হয়, কিছু ভেঙে ফেলা হয় পুরোপুরি। কিছু এলাকায় কবরস্থান পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয় বা চারপাশে বেড়া দিয়ে রোহিঙ্গা অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। বো দু ফার এক নারী বলেন, —‘তার বাবার কবরের ওপর সামরিক তাঁবু তোলা হয়েছে’।
যে জমিতে রোহিঙ্গারা শত শত বছর ধরে চাষাবাদ করেছে, এখন তা দখলে নিচ্ছে এএ-এর তথাকথিত ‘সিকিউরিটি পাথ ইনিশিয়েটিভ’ এর আওতায়। কাগজে-কলমে এটি একটি প্রতিরক্ষা প্রকল্প হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও বাস্তবে এটি হচ্ছে রোহিঙ্গা জমি অন্যদের হাতে তুলে দেওয়ার একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া—যাতে যারা পালিয়ে গেছে, তারা আর কখনো ফিরতে না পারে।
একজন স্থানীয় প্রতক্ষ্যদর্শী বলেন: ‘তারা শুধু আমাদের উচ্ছেদই করেনি, আমাদের জায়গায় অন্যদের বসিয়েছে।’
যদি এটা হতো আপনার নিজের পরিবার…
যদি সশস্ত্র মানুষ এসে আপনার বোনকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যেত, যদি আপনার ছেলেটা শিকল পরা অবস্থায় কোন বন্দিশিবিরে মরে যেত, যদি আপনার বাবার কবরটা বুলডোজার দিয়ে মুছে দিয়ে তার স্মৃতিটুকুও মুছে ফেলা হতো—তাহলে কি আপনি চুপ করে থাকতেন ?
আমাদের সাথে সেটাই হয়েছে। একবার না, বহুবার। কোনো দূর অতীতে না—বরং ১৯৪৮ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বারবার। নদীতে ভেসে ওঠা মৃতদেহগুলো আমাদের ছিল। নামহীন শিশুগুলো ছিলো আমাদের। স্যাটেলাইট ইমেজে যেসব খালি ঘর দেখা যায়—ওগুলোও আমাদের। আর আমরা এখনো বেঁচে আছি, সব মনে রেখেছি, সেই ন্যায়ের অপেক্ষায় আছি—যা কোনোদিন আসেনি।
আমরা উম্মাহর কান্না শুনেছি অন্যদের জন্য—আমরাও কেঁদেছি তাদের সাথে। কিন্তু যখন আমাদের পালা এলো, তখন অধিকাংশই মুখ ঘুরিয়ে নিল।
এটা শুধু আরাকানের বিষয় নয়। এটা সেই ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যা সৃষ্টি হয় যখন ক্ষমতাবানরা কিছু না করে বসে থাকে আর বাকিরা ভাবেও না। এই নীরবতার দাম তারাই দেয়—যাদের আর কোনো কণ্ঠ নেই।
যদি দুনিয়া রোহিঙ্গাদের কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে—তাহলে ভাবো, আমরা যারা এই জীবন বয়ে নিয়ে চলেছি, আমরা কতটা ক্লান্ত।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ
‘যদি তারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য চায়, তবে তোমাদের সাহায্য করা ওয়াজিব।’ (সূরা আনফাল ৮:৭২)
আমরা করুণা চাই না। আমরা কেবল আপনার কাঁধে যে দায়িত্ব ছিল, সেটাই মনে করিয়ে দিচ্ছি।
এখন আর বলতে পারবেন না, ‘আমি জানতাম না’
আপনি চাইলে এটা পড়ে ভুলে যেতে পারেন । কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ নেই। আমরা এই জীবনই কাটাচ্ছি—ভূমিহীন, নিরাপত্তাহীন এবং সবার মনোযোগের বাইরে। অথচ আপনি , যে এই লেখা পড়ছেন , এখনো একটা পথ বেছে নিতে পারেন । অথবা চাইলে ২০১৭-এর মতোই ভুলে যেতে পারেন । অথবা এই কথাগুলোকে নিজের ভেতর ধরে রাখতে পারেন— দুয়ায়, বিবেকের মাঝে, আর নিজ দায়ত্ববোধে ।
একটা প্রশ্ন করুন নিজেকে—যদি এটা হতো আপনার জাতি, আপনার সন্তান—তাহলে কি নীরবতা এখনো সহজ মনে হতো?
‘আর যেন বলো না, জানতাম না।’
কারণ এখন আপনি জানেন ।
এটা শুধু রোহিঙ্গাদের গল্প নয়। এটা উম্মাহর সামনে তোলে ধরা একটা আয়না।
আপনারা ছবিগুলো দেখেছেন। সংবাদপত্রে হেডলাইন পড়েছেন। আর্তনাদের শব্দ শুনেছেন। কিন্তু চুপ করে থাকাটা সহজ ছিল। দূরে থাকা আরামদায়ক ছিল। সময় আপনাকে ভুলে যেতে সাহায্য করেছে। ২০১৭ সালে আমরা ছিলাম দুনিয়ার আলোচনার কেন্দ্রে। আর ২০২৫ সালে আমরা আপনার সত্যিকারের ঈমানের পরীক্ষা।
ইতিহাস আপনার অনুভূতির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে না। সে জিজ্ঞেস করবে—আপনি কী করেছিলেন।
যদি এই লেখা পড়ে আপনার হৃদয় ভারী হয়ে ওঠে, হোক। এই ভারটা বোঝা নয়—এটা সূচনা। এটা যেন আপনাকে মুখ খুলতে বাধ্য করবে, প্রশ্ন তুলতে শেখাবে, মনে রাখতে শেখাবে।
কারণ, সবচেয়ে নিষ্ঠুর বিষয় কেবল আমাদের ওপর যা হয়েছে তা নয়—বরং সেটা যে,
আপনি জানতেন—কিন্তু কিছু বলেননি।
এখন দয়া করে এটা পড়ে করে পাশ কাটিয়ে যাবেন না। আরেকটা গণহত্যার জন্য অপেক্ষা করবেন না।
আমরা এখনো আছি।
আর এখন কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও তার রাসূল সা এর সামনে বলতে পারবেন না—
‘আমি জানতাম না।’
সাইদুল আমিন
রোহিঙ্গা বিষয়ক লেখক ও গবেষক
sayedulamin@proton.me





