সমুদ্রপথে মিশরীয়দের পাঠানো খাদ্যভর্তি বোতল সত্যি কি গাজায় পৌঁছেছে, নাকি গুজব
‘সমুদ্রপথে বোতল ভাসিয়ে মিশরীয়রা গাজার ক্ষুধার্ত মানুষদের খাওয়াচ্ছে’—এমন আবেগঘন একটি বাক্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর সঙ্গে ভাইরাল হয় কয়েকটি ছবি, যেখানে দেখা যায়, সাগরের পানিতে ভাসছে খাবারের প্যাকেট ও প্লাস্টিকের বোতল। দাবি করা হয়, মিশরের উপকূল থেকে এসব ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে অবরুদ্ধ গাজার মানুষের জন্য।
ছবিগুলোতে কোথাও দেখা যায় শিশুখাদ্য, কোথাও চাল-ডালের মতো খাদ্যসামগ্রী। কিছু বোতলে লেখা—‘মিশরের জনগণের পক্ষ থেকে গাজার মানুষদের জন্য।’ আবেগে আপ্লুত হয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এগুলোকে মানবিক উদ্যোগ হিসেবে প্রচার করছেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—এই ঘটনা কি সত্যি? ছবিগুলো কি আসল, নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো?
অনুসন্ধানে যা উঠে এলো
আল জাজিরার ফ্যাক্ট চেকিং ইউনিট ‘সানাদ’ এসব ছবি বিশ্লেষণ করে জানায়, ছড়িয়ে পড়া অধিকাংশ ছবিই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে।
বিশেষ করে একটি ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, কয়েকজন মানুষ উপকূলে দাঁড়িয়ে সাগরে বোতল ছুড়ে দিচ্ছেন। দাবি করা হয়, এটি মিশরের উপকূলে ধারণ করা ছবি। এবং বলা হচ্ছে, এই উদ্যোগ সীমান্ত ও কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে গাজার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানবিক প্রতীক।

তবে সানাদ জানায়, এই ছবির প্রতিটি উপাদান—মানুষের মুখ, শরীরের গঠন, হাত-পায়ের ভঙ্গি—সবই বিকৃত ও অস্বাভাবিক। ছবি বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়, এটি মূলত এআই দিয়ে বানানো।
এদিকে গাজার উপকূলে খাবার পৌঁছেছে—এই দাবিও সন্দেহজনক।
পরবর্তীতে এমন আরও কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায় গাজার উপকূলে তরুণদের হাতে মিশরীয়দের পাঠানো শিশুখাদ্য ও প্যাকেটজাত খাবার পৌঁছেছে। অনেকের মুখে ছিল বিস্ময় ও আনন্দের ছাপ।
তবে সানাদ এসব ছবিকেও নকল বলেছে। তারা ছবিগুলোর মধ্যে যেসব অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করেছে:
• আলো-ছায়ার অস্বাভাবিক গড়ন
• আশপাশের পরিবেশের সঙ্গে অসামঞ্জস্য
• মানুষের চেহারা ও দেহে সূক্ষ্ম ডিজিটাল বিকৃতি
• এগুলো সবই এআই দিয়ে বানানো ছবির সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
প্রচেষ্টা কিছুটা বাস্তব, ছবি নয়
ছবিগুলো ভুয়া হলেও, ঘটনাটিকে পুরোপুরি গুজব বলা যায় না। আল জাজিরা জানায়, মিশরের কিছু মানুষ সীমিত পরিসরে সত্যিই চেষ্টা করেছেন সাগরপথে খাবার পাঠাতে। মূলত, প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবেই তারা বোতলে ভরে কিছু খাদ্যসামগ্রী সাগরে ভাসিয়েছেন।
তবে, গাজার দুই তরুণ দাবি করেছেন, তারা সাগর থেকে ডালভর্তি দুটি বোতল পেয়েছেন। তবে এই দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা যায়নি।
বাস্তবতা ছবির চেয়েও বেশি নির্মম
বস্তুত, ভাইরাল ছবিগুলো থেকে গাজার বাস্তবতা আরও ভয়াবহ। গাজার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের কম বয়সী প্রায় ৪০ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর মুখে এগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা