গত শুক্রবার থেকে ইরান একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইসরায়েলের দিকে। পাল্টা প্রতিরোধে মোতায়েন ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তবে এর পেছনে খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ বলছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিটি ব্যাচ ঠেকাতে ইসরায়েলের ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১ বিলিয়ন শেকেল, যা প্রায় ২৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সমান।
ইসরায়েলের হাতে একাধিক আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—‘আয়রন ডোম’, ‘অ্যারো’, ‘ডেভিডস স্লিং’ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় স্থাপিত ‘থাড’। তবে বর্তমানে ইসরায়েলের মূল ভরসা ‘অ্যারো’ সিস্টেম, হিব্রু ভাষায় যার নাম ‘হেত্স’। ব্যবহৃত হচ্ছে এর দুটি সংস্করণ—‘অ্যারো-২’ ও ‘অ্যারো-৩’।
২০২৩ সালের শেষ দিকে অর্থনীতি বিষয়ক ইসরায়েলি পত্রিকা গ্লোবস জানায়, অ্যারো-২ মূলত বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করে, আর অ্যারো-৩ কাজ করে বাইরের স্তরে। দুটি ব্যবস্থাই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম, তবে উচ্চতার দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই ইসরায়েলি ভূখণ্ডের অনেক দূর থেকেই হুমকি প্রতিহত করা।
তবে এসব প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এর খরচ। আয়রন ডোম ব্যবস্থায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে প্রায় ৩০ হাজার ডলার লাগে। ডেভিডস স্লিংয়ে খরচ পড়ে ৭ লাখ ডলার, অ্যারো-২-তে ১৫ লাখ ডলার এবং অ্যারো-৩ ব্যবহারে প্রয়োজন পড়ে প্রায় ২০ লাখ ডলার।
মঙ্গলবার ইসরায়েল সরকারের প্রেস অফিস জানায়, শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত ইরান ৪০০-র বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ছুড়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের ভেতরে আঘাত হেনেছে। ঠিক কোথায় আঘাত করেছে, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি।
ইসরায়েলি এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রধান নির্বাহী বুয়াজ লেভিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কি সর্বোচ্চ সক্ষমতার সীমায় পৌঁছে গেছে? জবাবে তিনি বলেন, এ রকম ধরনের ব্যালিস্টিক হামলার মুখে বিশ্বের আর কোনো দেশ এভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি, যেভাবে আমরা পেরেছি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, অ্যারো-৩ ব্যবস্থার সফল প্রতিহতের হার ৯০ শতাংশ। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের থাড সিস্টেমের সফলতা মাত্র ৪০ শতাংশ।
ইরান থেকে পাল্টা হামলার জেরে গত শুক্রবার সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। তারা ইরানের সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক স্থাপনা ও বেসামরিক অবকাঠামোয় হামলা চালায়। এতে নিহত হন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা, সামরিক কমান্ডার এবং কয়েকজন খ্যাতনামা পারমাণবিক বিজ্ঞানী। এর জবাবে ইরানও চালায় ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, যার ফলে ইসরায়েলের একাধিক শহরে নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি