গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরায়েলি হামলায় চিকিৎসক আলা আল-নাজ্জারের ৯ শিশুসন্তান শহিদ হয়েছে। আলা যখন হাসপাতালে অন্যদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত ছিলেন, তখনই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
•
মর্মান্তিক সেই খবর
আলা আল-নাজ্জারের বোন সাহার বিবিসিকে জানিয়েছেন, ৯ সন্তানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আলা যখন হাসপাতালে কাজ করছিলেন, তখন তিনি শুধু বিমর্ষ হয়েছেন। সাহার তাকে ব্যথাতুর হৃদয়ে বললেন, “বাচ্চারা তো চলে গেলো, আলা!” আলা তখন দৃঢ় ঈমানের সাথে সন্তুষ্টচিত্তে জবাব দিলেন: “কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তারা মৃত নয়; বরং তারা তাদের রবের নিকটে জীবিত আছে এবং তারা রিযিক পাচ্ছে।”
আল-নাজ্জার পরিবারের বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো ওই হামলায় নিহত ৯ শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। সাহার আল-নাজ্জার আরও নিশ্চিত করেছেন যে, নিহত শিশুদের মধ্যে যারা বড় ছিল, তাদের সবাই কুরআনের হাফেজ ছিল।
•
হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় নিজ সন্তানের মরদেহ গ্রহণ
ডাক্তার আলা আল-নাজ্জার একজন শিশু বিশেষজ্ঞ। যখন তার সন্তানদের ওপর হামলা হয়, তখনও তিনি হাসপাতালেই চিকিৎসাসেবা দিচ্ছিলেন। এই হৃদয়বিদারক খবর পাওয়ার পর তিনি দ্রুত বাড়ির দিকে ছুটে যান, কারণ তিনি শেষবারের মতো সন্তানদের দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি পৌঁছান, তখন তার সন্তানরা ততক্ষণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডক্টর মুনির আল-বারশ এক্স-এ এক পোস্টে জানান, ডক্টর আলা আল-নাজ্জার তার ৯ সন্তানের মরদেহ নিজেই নাসার হাসপাতালে গ্রহণ করেছেন, যখন তিনি তার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নিহত ৯ শিশু হলো— ইয়াহিয়া, রাকান, রাসসালান, জিবরান, ইভ, রিফান, সিদিন, লোকমান এবং সিদরা। বর্তমানে ডক্টর আলা আল-নাজ্জারের দশ সন্তানের মধ্যে জীবিত আছে একমাত্র সন্তান আদম। এই হামলায় আদমও আহত হয়েছে এবং তার বাবা ডক্টর হামদিও আহত হয়েছেন।
•
‘আমরা গাজার মুসলমানদের প্রতিরক্ষায় নিযুক্ত আছি’
ডক্টর মুনির আল-বারশ জানান, আলা আল-নাজ্জারের স্বামী ডক্টর হামদি আল-নাজ্জার বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। যুদ্ধের শুরুতেই তার গাজা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল, কিন্তু তিনি সেখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং বন্ধুদের বলতেন, “আমরা গাজার মুসলমানদের প্রতিরক্ষায় নিযুক্ত আছি।” ফিলিস্তিনি এই চিকিৎসকের প্রতি সংহতি জানিয়ে এক ফিলিস্তিনি নারী ২৫ মে, ২০২৫ তারিখে এক্স-এ একটি হৃদয়স্পর্শী পোস্ট করে লিখেছেন, “শিশু বিশেষজ্ঞ ডক্টর আলা আল-নাজ্জার হাসপাতালে নিজের কর্মস্থলে থাকাকালীন সময়ে তার সন্তানদের শহিদ হওয়ার খবর পেয়েছেন…। যিনি অন্যদের জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা করছেন, অথচ সারা বিশ্ব তাঁর সন্তানদের রক্ষা করতে পারল না—এর চেয়ে বড় যন্ত্রণা আর কী হতে পারে?”
আলার বোন সাহার আল-নাজ্জার তার বোনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। তিনি বলেছেন, “আলা এখন হতবিহ্বল অবস্থায় আছে। এই মুহূর্তে সে নিজেকে শক্ত রাখলেও, আমার ভয় হয়, যেকোনো সময় সে ভেঙে পড়তে পারে।”
সূত্র: অ্যারাবিক পোস্ট