মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় খাদ্য সংকট বনাম আরব বিশ্বের বিলাসী অপচয় 

গাজায় খাদ্য সংকট বনাম আরব বিশ্বের বিলাসী অপচয় 
গাজায় খাদ্য সংকট বনাম আরব বিশ্বের বিলাসী অপচয় 

গত এক বছরে আরব দেশগুলোতে যে পরিমাণ খাদ্য অপচয় হয়েছে, তার পরিমাণ শুধু গাজার দুর্ভিক্ষই দূর করতে যথেষ্ট নয়—বরং তা দিয়ে জেরুজালেম ও ফিলিস্তিন মুক্তির পথেও অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যেত! এমনটাই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানভিত্তিক বিশ্লেষণে।

গাজার প্রতিরোধ যুদ্ধে গত ৪৭০ দিনেরও বেশি সময়ে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে অবিস্মরণীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, তাতে সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ইসরায়েল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। অথচ এই প্রতিরোধে ব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ কয়েক শ কোটি ডলারের বেশি নয়। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে আরব বিশ্বে অপচয় হওয়া খাবারের বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার—অর্থাৎ প্রতিরোধ যুদ্ধে ব্যয়িত অর্থের প্রায় ১৫০ গুণ বেশি!

খাদ্য অপচয়ে শীর্ষে আরব বিশ্ব 

খাদ্য অপচয় নিয়ে এক প্রতিবেদনে ইউএনইপি-এর পরিসংখ্যান বলা হয়, বিশ্বে খাদ্য অপচয়ে আরব দেশগুলো অন্যতম।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে (ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ ওয়েবসাইটের খাদ্য বর্জ্য শিরোনাম ব্যবহার করে) এবং ফেলে দেওয়া খাবার ও নষ্ট খাবারের একটা সহজ হিসাব অনুযায়ী, মোট অপচয়ের পরিমাণ অনুমানিক ৫ কোটি ৯ লক্ষ ৬৮০ হাজার টন।

২০২৪ সালে মিশরে খাদ্য অপচয় হয়েছে ১৮.১ মিলিয়ন টন। যার বার্ষিক হার ব্যক্তি প্রতি ১৫৫ কিলোগ্রাম। ইরাকে ৬.৪ মিলিয়ন টন, ব্যক্তি প্রতি ১৩৮ কিলোগ্রাম। সৌদি আরবে ৩.৮ মিলিয়ন টন, ব্যক্তি প্রতি গড় ১১২ কিলোগ্রাম। আলজেরিয়ায় ৫.১ মিলিয়ন টন, যার গড় প্রতি ব্যক্তি ১০৮ কিলোগ্রাম। মরোক্কোতে পরিমাণ ছিল ৪.২ মিলিয়ন টন, ব্যক্তি প্রতি গড়ে ১১১ কিলোগ্রাম। আরব আমিরাতে অপচয়ের পরিমাণ ছিল ৯ লক্ষ ৩০ হাজার টন, ব্যক্তি প্রতি ৯৯ কেজি। তিউনিসিয়ায় এর পরিমাণ ছিল ২.১ মিলিয়ন টন, ব্যক্তি প্রতি প্রায় ১৭৩ কিলোগ্রাম। 

কুয়েতে ৪২০ হাজার টন, ব্যক্তি প্রতি ৯৯ কিলোগ্রাম। জর্ডানে ১.১ মিলিয়ন টন, ব্যক্তি প্রতি ৯৮ কিলোগ্রাম। 

২০২১ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে  মিশর, ইরাক ও তিউনিসিয়ার মতো দেশ গুলোতে মাথাপিছু খাবার নষ্টের পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে,  প্রায় ১০.৬৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের খাদ্য অপচয় হয়েছে।

আরব বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত খরচের নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকলেও কিছু দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গড় খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২,৮০০ মার্কিন ডলার। তবে অঞ্চলভেদে পার্থক্য থাকায় এবং আরব দেশগুলোর গড় খরচ তুলনামূলকভাবে কম ধরে নিয়ে হিসাব করলে, এ খরচ প্রায় ২,৫০০ ডলারে নামিয়ে আনা যায়।

এই পরিসংখ্যান মাথায় রেখে ২০২৪ সালে আরব বিশ্বে মোট অপচয় হওয়া খাবারের পরিমাণ—যা প্রায় ৫৯.৬৮ মিলিয়ন টন—এর খরচ দাঁড়ায় প্রায় ১৪৯ বিলিয়ন ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এক কথায়, এই অঙ্কটি শুধু চোখ কপালে তোলার মতোই নয়, বরং পুরো আরব বিশ্বের অর্থনৈতিক ও নৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।

 উপরের তথ্যের আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

উপরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আরব বিশ্বের খাদ্য অপচয়ের চিত্র কেবল উদ্বেগজনকই নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবিও।

প্রথমত, এই পরিস্থিতির জন্য আরব বিশ্বের সরকার ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো বড় ধরনের দায় এড়াতে পারে না। কারণ, এসব দেশের অনেকেই পরিকল্পিতভাবে একটি ভোগবাদী সংস্কৃতি লালন করে—যেখানে ‘উন্নয়ন’ মানেই যেন ‘বিলাসিতা’। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে টিকিয়ে রাখতে তারা ব্যবহার করে বিশাল মিডিয়া এবং সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম। অথচ, ‘বিলাসিতা’ এবং ‘অপচয়’ রোধে কার্যকর কোনও রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি দেখা যায় না।

অন্যদিকে, এসব দেশের একটি অংশ ইসলামি মূল্যবোধ এবং জাতীয়তাবাদী চেতনাকে দমনে সচেষ্ট। তারা ইহুদিবাদী প্রকল্পের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির পরিবর্তে, জনগণের মধ্যে এই অনুভূতিগুলোর বিকাশ ঠেকাতে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রশাসনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

আর এমন এক সময়ে, যখন কিছু আরব সরকার  ‘ফিলিস্তিনের জন্য যথেষ্ট করেছে’ বলে দাবি করে, তখন উপস্থাপিত পরিসংখ্যান আমাদের সামনে একটি নির্মম বাস্তবতা তুলে ধরে: গত বিশ বছরে ফিলিস্তিনের জন্য যে আর্থিক সহায়তা তারা দিয়েছে, তা তাদের নিজস্ব দেশে এক বছরে ফেলে দেওয়া খাবারের অর্থমূল্যের কাছাকাছিও নয়!

অর্থাৎ, ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুখে যতই সহানুভূতির কথা বলা হোক না কেন, বাস্তবতা বলছে—আরব বিশ্বের অপচয়ই তাদের অবস্থানকে সবচেয়ে ভালোভাবে উন্মোচন করে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি আরব দেশ, যাকে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তারা ১৯৯৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে যে আনুষ্ঠানিক সহায়তা দিয়েছে তার পরিমাণ মোটে তিন বিলিয়ন ৯২৫ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে UNRWA-কে দেওয়া সহায়তা যুক্ত করলে যা প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার, মোট সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় চার বিলিয়ন ৭৭৫ মিলিয়ন ডলার। অথচ এই অঙ্ক এক বছরের খাদ্য অপচয়ের অর্ধেকেরও কম।

একইভাবে, বেশিরভাগ আরব দেশ গত পঞ্চাশ বছরে ফিলিস্তিনকে যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, তা তাদের এক বছরে বর্জ্যে ফেলে দেওয়া খাবারের চেয়ে বেশি নয়।

অন্যদিকে, কিছু আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে অর্থনৈতিক লাভ তুলছে। তারা স্থলপথে একটি ‘খাদ্য সরবরাহ লাইন’ গড়ে তুলে ইসরায়েলের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখছে, ঠিক এমন এক সময়ে যখন ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় খাদ্য অবরোধ দিয়ে রেখেছে।

অন্যদিকে, কিছু আরব সরকার জনসাধারণের তহবিল ও সহায়তা কার্যক্রমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। তারা গণ-উদ্যোগে সংগৃহীত দান-অনুদানকে সীমিত ও অকার্যকর সরকারি কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ করেছে, এমনকি বহু দেশে চ্যারিটি ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও ফিলিস্তিন সংক্রান্ত স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমকে মর্যাদার নয়, বরং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—যার ফলে এই খাতে সক্রিয় বহু ব্যক্তি হয়রানি ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, খাদ্য অপচয়ে সাধারণ মানুষের ভূমিকাও উপেক্ষা করার মতো নয়। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট খাদ্য অপচয়ের ৬০ শতাংশই আসে ঘরোয়া পর্যায় থেকে—অর্থাৎ পরিবার ও ব্যক্তিগত স্তরে খাবার ফেলে দেওয়া হয়।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, এই অপচয় পবিত্র রমজান মাসে আরও বেড়ে যায়। একাধিক আরব দেশে হিসাব অনুযায়ী, রমজানে রান্না করা খাবারের ৫০ শতাংশেরও বেশি শেষ পর্যন্ত বর্জ্যে চলে যায়।

আমাদের আরব সমাজে আতিথেয়তা ও উদারতার মতো ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে বিলাসিতা, অপচয়, ভুল হিসাব-নিকাশ এবং সামাজিক আড়ম্বরের নেতিবাচক প্রবণতাগুলো একত্রে মিশে গেছে—বিশেষ করে দাওয়াত, অনুষ্ঠানে এবং পারিবারিক আয়োজনগুলোতে।

এই অপচয়ের চিত্র কিছুটা হলেও ‘তুফানুল আকসা’র প্রভাব অনুভব করে কমে এসেছিল। অনেকেই সে সময়ে খাবার অপচয় কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে এই সচেতনতা ছিল ক্ষণস্থায়ী—এটি কোনো সংস্কৃতি বা দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়নি। ফলে ২০২৪ সালের পরিসংখ্যানগুলো আবারও দেখিয়েছে যে, আরব সমাজে ‘ভোগবাদী সংস্কৃতি’ এখনও প্রবল এবং তা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় অনেক বেশি।

আরব বিশ্বে ফিলিস্তিন প্রশ্নে গণমানুষের সহানুভূতি, প্রতিরোধের প্রতি সমর্থন, স্বাভাবিকীকরণের বিরোধিতা এবং সরকারি অবস্থানের প্রতি ক্ষোভ–এই সবই স্পষ্ট। তবে একটি তুলনামূলক পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ দেখায়, জনসাধারণের দান-অনুদানের মোট অঙ্ক—যা তারা ফিলিস্তিনের জন্য দেয়—তা ‘জনসাধারণের’ নিজস্ব খাদ্য অপচয়ের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

তৃতীয়ত, গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আমাদের আরব দেশ ও সমাজ—বিশেষত যেসব দেশ আল্লাহর দানকৃত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ—তারা একটি বড় ভুলের শিকার হয়েছে। তারা যেন পশ্চাৎপদতা থেকে ধাপে ধাপে উন্নয়নের পথে না গিয়ে সরাসরি ভোগ-বিলাসের জীবনধারায় লাফ দিতে চেয়েছে। ফলে ‘মানবগঠনের’ মতো মৌলিক ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে তোলার বদলে বেশি মনোযোগ পেয়েছে ভোগবাদী সংস্কৃতি ও আরামপ্রবণ পরিবেশ তৈরি করা।

এই প্রেক্ষাপটে যদি আমরা বিবেচনায় রাখি যে এই অঞ্চল কয়েক শতাব্দীজুড়ে বিভাজন, ঔপনিবেশিক শাসন ও নানা ক্ষতিকর সামাজিক অভ্যাসে জর্জরিত ছিল, তাহলে বোঝা যায়—এই পটভূমিতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের নিরুৎসাহী, দায়িত্ব এড়ানো, অলস ও ভোগে নিমগ্ন “ভোগবাদী মানুষ”—যার চিন্তা ও চেতনা থেকে হারিয়ে গেছে উম্মাহর ভবিষ্যতের চিন্তা ও আত্মত্যাগের চেতনা।

অন্যদিকে, সরকারি বিধিনিষেধ ও সেগুলোর সহায়তাপ্রাপ্ত গণমাধ্যম কিছুটা প্রভাব ফেললেও, জনমানুষের দৈনন্দিন জীবন ও সামাজিক আচরণের তুলনায় প্রকৃত সহায়তা বা কার্যকর সমর্থনের পরিমাণ এখনও খুবই সীমিত। অর্থাৎ, ‘অপচয়ের সংস্কৃতি’ এখনও দৃশ্যমানভাবে ‘সহযোগিতার সংস্কৃতি’তে রূপান্তরিত হয়নি।

এদিকে, যদি আমরা বিবেচনায় নেই যে এই অঞ্চল শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভাজন, ঔপনিবেশিক শাসন ও ক্ষতিকর সামাজিক রীতিনীতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছে, তাহলে দেখা যায়—এর ফলাফল হিসেবে জন্ম নিয়েছে এক ধরনের ভোগবাদী, অলস, দায়িত্ব এড়ানো জনগোষ্ঠী; যারা মূলত ব্যস্ত থাকে আরামের উপকরণ ও বিনোদনের মাধ্যম ঘিরে, অথচ জাতির দায়িত্ব ও বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি মনোযোগ তুলনামূলকভাবে কম।

কার্যকর সহায়তার পথে

ফিলিস্তিন ও এর জনগণের প্রতি আরবদের সমর্থন কোনো দয়া বা করুণা নয়—এটি এক ধরনের কর্তব্য, যেখানে অনুগ্রহের ঋণ কিংবা লজ্জা-অপমানের কোনো জায়গা নেই। এই সমর্থন একটি ইসলামী দায়িত্ব, একটি জাতীয় দায়িত্ব, আর একটি আরব পরিচয়ের দায়িত্ব। কারণ, এটি শুধু ভূমি ও পবিত্র স্থান রক্ষার সংগ্রাম নয়—বরং একটি জায়োনিস্ট প্রকল্পের মুখোমুখি দাঁড়ানোর লড়াই, যা পুরো উম্মাহ, এর সার্বিক স্বার্থ এবং আরব দেশগুলোর জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। একইসঙ্গে এটি একটি মানবিক ও সভ্যতাগত দায়িত্ব।

যদি সামরিকভাবে জায়োনিস্টদের মোকাবিলা সম্ভব না-ও হয়, অন্তত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্যালেস্টিনের ন্যায্য দাবির পক্ষে দাঁড়ানো প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে সমর্থন করা এবং জায়োনিস্ট প্রকল্পের মোকাবিলা করা, সত্যিকারের দায়িত্ববোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই দায়িত্ব শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—বরং তা বাস্তব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও আচরণ এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তা একটি ঐক্যবদ্ধ, জাগ্রত ও ন্যায়ভিত্তিক উম্মাহ গঠনের পথ তৈরি করে—যেখানে মানুষ হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকৃত প্রতিনিধিত্বকারী।

জায়োনিস্ট প্রকল্পের মোকাবিলা করতে গেলে আমাদের ‘অগ্রাধিকারের ফিকহ’ ও ‘নাজিলাবস্থার ফিকহ’—এই দুটিকে নতুনভাবে চিন্তা ও বিবেচনার দরকার রয়েছে। একইসঙ্গে দরকার ভোগবিলাস ও অপচয়কে পরিত্যাগ করা—যা যে কোনো সভ্যতার পতনের স্পষ্ট লক্ষণ। তার পরিবর্তে গ্রহণ করতে হবে এমন এক জীবনদর্শন, যা শৃঙ্খলা, সৃজনশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেয়। এটি আমাদের আহ্বান জানায় একটি সজাগ, সুশৃঙ্খল ও উৎপাদনমুখী জীবনের দিকে—যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ ও নিয়ামতসমূহ ব্যবহৃত হয় যথাযথ দায়িত্ব ও সচেতনতার সঙ্গে।

সবশেষে, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন থেকেই কিছুটা পরিবর্তন শুরু করতে পারি ফিলিস্তিন—বিশেষ করে গাজা—প্রসঙ্গে সংবেদনশীলতার মাধ্যমে। অন্ততপক্ষে আমাদের ভোগের আচরণ বদলানো, খাদ্য অপচয় বন্ধ করা এবং বাঁচানো অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়া বা ন্যূনতম খাদ্য বর্জন করে রোজা রাখার মাধ্যমে সেই খাবারের সমমূল্য গাজার মানুষের সহায়তায় ব্যয় করা—এই পদক্ষেপগুলো নিতে পারি। এতে করে গাজার দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি উম্মাহর অন্যান্য নিপীড়িত মানুষের কষ্টও কিছুটা লাঘব হতে পারে।

সর্বশেষ