মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইরাকের রাজনীতিতে নতুন গতি, ইরানি প্রভাব রুখতে ‘আইন ৩৬’

ইরাকের রাজনীতিতে নতুন গতি, ইরানি প্রভাব রুখতে ‘আইন ৩৬’
ইরাকের রাজনীতিতে নতুন গতি, ইরানি প্রভাব রুখতে ‘আইন ৩৬’

ইরাকের আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচন ঘিরে একটি স্পষ্ট ও জোরালো দাবি উঠেছে—ইরানঘনিষ্ঠ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবির কেন্দ্রে রয়েছে ‘৩৬ নম্বর আইন’। দীর্ঘদিন ধরে ইরাকের রাজনীতিতে ইরানের প্রভাব থাকলেও এবার অনেকেই বলছেন—সময়ের পরিবর্তন দরকার।

২০১৯ সালে পাস হওয়া ‘৩৬ নম্বর আইন’ অনুযায়ী, কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবে না। তবে, এই আইন এখনো বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। নির্বাচনের আগে এই আইন কার্যকরের দাবি নতুন করে জোরালো হয়েছে। অনেক নাগরিকের মতে, এটি বাস্তবায়িত হলে ইরাকি রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে।

২০১৯ সালের অক্টোবরের তাশরিন আন্দোলনে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা সাম্প্রদায়িক কোটা ব্যবস্থা, দুর্নীতি ও ইরানি প্রভাবের বিরুদ্ধে মুখ খোলে। যদিও পরে সেই আন্দোলন দমন করা হয়, আন্দোলনের চেতনা এখনো বেঁচে আছে অনেকের মাঝে।

মুজতবা আহমদ, তাশরিনে আহতদের জন্য কাজ করা সংস্থা ‘সাফা’-র সহসভাপতি বলেন, আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে অস্ত্র ও কালো টাকার প্রভাব থাকবে না। ইরাককে নিজস্ব কণ্ঠে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।

নাগরিক সমাজের নেত্রী ইউসরা জায়নাব মনে করেন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনে ইরানঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোর আত্মবিশ্বাস কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, এটি নাগরিক ও প্রগতিশীল শক্তির জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। এখন যদি না হয়, তাহলে আর কখন?

২০১৮ সালের নির্বাচনে এই গোষ্ঠীগুলো সংসদের বড় অংশ দখল করে। তবে ২০১৯-এর আন্দোলন এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে তাদের জনপ্রিয়তা কমে যায়। কিন্তু পরে মুকতাদা আল-সাদরের জোট সংসদ থেকে সরে গেলে তারা আবার রাজনীতির মূল মঞ্চে ফিরে আসে।

‘বসরিয়াথা’ সংস্থার প্রধান আম্মার সারহান মনে করেন, মিলিশিয়াগুলো তাদের সদস্যদের ভোটে প্রভাব ফেলছে। তাঁর পরামর্শ—এই গোষ্ঠীগুলোকে নিরাপত্তা বাহিনীতে একীভূত করতে হবে, যাতে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন। একইসঙ্গে তিনি বহুবিধ নির্বাচনী এলাকার ব্যবস্থাও ফিরিয়ে আনার পক্ষে।

২০০৩ থেকে এ পর্যন্ত ইরাকে ছয়বার নির্বাচনী আইন পরিবর্তন হয়েছে। নানা ফর্মুলায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে আনা হয় সংখ্যাগরিষ্ঠভিত্তিক ও বহুমানদণ্ডভিত্তিক পদ্ধতি, যাতে ৭০ জন স্বাধীন প্রার্থী নির্বাচিত হন। কিন্তু ২০২৩ সালে পুরনো দলগুলো ফের ক্ষমতার ভারসাম্য নিজের দিকে আনার চেষ্টা চালায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ওয়াসিক লুফতা বলেন, নতুন দলগুলোর অর্থ, অস্ত্র বা ক্ষমতা—কিছুই নেই। তবুও তাদের মাধ্যমেই দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের আশা করা যায়।

বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনমার সারায় মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমলেও ইরাকের অভ্যন্তরে তা তেমন একটা কমবে না। বরং এই গোষ্ঠীগুলোর শক্তি এখন এতটাই বেশি যে ইরানও তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রমজান আল-বাদরানের ভাষায়, এই গোষ্ঠীগুলো এখন শুধুমাত্র ইরানের এজেন্ট নয়—তারা নিজেই ইরাকি রাজনীতির সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাদরান মনে করেন, নাগরিক শক্তির প্রয়োজন একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক পরিকল্পনা, যা সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার দুর্বলতা চিহ্নিত করে এগোতে পারবে।

সংসদ সদস্য ফাতেন কারাহ ঘুলি বলেন, আমরা জনগণকে বোঝাতে চাই, কারা সত্যিকারের রাষ্ট্র নির্মাণে বিশ্বাস করে। ভয় কাটাতে হবে—স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

ইরাকের রাজনীতিতে এক মোড়বদলের মুহূর্ত হয়তো এসে গেছে। ৩৬ নম্বর আইনের বাস্তবায়ন, ইরানি প্রভাবমুক্ত একটি নির্বাচন এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা মিলিয়ে এবারের নির্বাচন হতে পারে একটি ঐতিহাসিক বাঁক। এখন দেখার বিষয়, সত্যিই কি পরিবর্তন সম্ভব? নাকি সবকিছু আবারও পুরনো অবস্থায় ফিরে যাবে?

সর্বশেষ