মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামল স্পেন

বন্দরে অস্ত্র পরিবহনের অভিযোগে তদন্তের মুখে মার্স্ক
ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামল স্পেন
ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামল স্পেন

ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধে স্পেনে দীর্ঘদিনের জনমত ও আইনি লড়াই এবার নতুন গতি পেয়েছে। সম্প্রতি বার্সেলোনার একটি আদালত ডেনমার্কভিত্তিক বহুজাতিক জাহাজ কোম্পানি ‘মার্স্ক’-এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি স্পেনের বন্দর ব্যবহার করে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ করেছে।

তদন্তের অংশ হিসেবে আদালত ‘নেক্সি মার্স্ক’ এবং ‘মার্স্ক ডেট্রয়েট’ নামের দুটি জাহাজের ক্যাপ্টেনদের পরিচয় জানতে চেয়েছে। মার্স্কের স্পেন শাখা ‘মার্স্ক লজিস্টিকস অ্যান্ড সার্ভিসেস স্পেন’কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা যেন সংশ্লিষ্ট ক্যাপ্টেনদের নাম ও কোম্পানির আইনি প্রতিনিধির তথ্য আদালতে জমা দেয়।

তদন্ত শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন স্পেনজুড়ে নাগরিক সংগঠন ও মানবাধিকারকর্মীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তাঁদের মতে, গাজায় চলমান যুদ্ধাপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই তদন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আল জাজিরা নেটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মামলার প্রধান আইনজীবী দিয়েগো মেনিয়ানো বলেন, স্পেন সরকারের উচিত অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র বাণিজ্যের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি জাহাজের চালান খতিয়ে দেখেছি এবং নিশ্চিত হয়েছি, স্পেনের বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করে অস্ত্র ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছে।

মেনিয়ানো জানান, যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধানী সংস্থা ‘ডিক্লাসিফায়ড ইউকে’ ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডিচ’-এর প্রতিবেদনের পাশাপাশি ‘প্যালেস্টিনিয়ান ইয়ুথ মুভমেন্ট’-এর তথ্যে ভিত্তি করে মামলাটি করা হয়েছে। ওইসব তথ্য বলছে, মার্স্ক কোম্পানি স্পেনের আলজেসিরাস বন্দর ব্যবহার করে অস্ত্র ইসরায়েলে পাঠিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বার্সেলোনার বন্দরে নোঙর করেছিল ‘নেক্সি মার্স্ক’। তখন স্থানীয় কিছু কর্মী আদালতে আবেদন করে জাহাজটিকে আটকে রাখার দাবি জানালেও, আদালত পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে সে দাবি খারিজ করে দেয়।

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অস্ত্র পরিবহন

‘নেক্সি মার্স্ক’ পরে ভ্যালেন্সিয়া ও আলজেসিরাস হয়ে মরক্কোর তাঞ্জিয়ারে যায়। সেখানেই মার্কিন জাহাজ ‘মার্স্ক ডেট্রয়েট’-এর সঙ্গে পণ্য আদান-প্রদান করে। পরে মে মাসের শুরুতে ওই অস্ত্রবোঝাই মালামাল ইসরায়েলের হাইফা বন্দরে পৌঁছায়।

এর আগে, স্পেন সরকার ঘোষণা করেছিল—ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে সামরিক সরঞ্জাম বহনকারী কোনো জাহাজ স্পেনের বন্দরে নোঙর করতে পারবে না। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, সেই নিষেধাজ্ঞা কার্যত বাস্তবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। নানা কৌশলে অস্ত্র পরিবহন অব্যাহত রয়েছে।

‘প্যালেস্টিনিয়ান ইয়ুথ মুভমেন্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আলজেসিরাস বন্দর ব্যবহার করে ৯৪৪টি জাহাজ ইসরায়েলে অস্ত্র পাঠিয়েছে।

বিপজ্জনক সংযোগ ও জবাবদিহির দাবি

আইনজীবী মেনিয়ানো আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা এখনো জানি না ঠিক কতটি জাহাজ এই কর্মকাণ্ডে জড়িত। মার্স্ক ছাড়াও আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এই ধরনের পরিবহন চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি জানান, মার্কিন প্রতিষ্ঠান ‘ওভারসিজ শিপহোল্ডিং গ্রুপ’ (OSG) নিয়মিতভাবে ইসরায়েলে সামরিক জ্বালানি সরবরাহ করছে, যা ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হয়। তাঁর ভাষায়, এই জ্বালানি দিয়েই ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ‘নেক্সি মার্স্ক’ এবং ‘মার্স্ক ডেট্রয়েট’ জাহাজ দুটি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে অন্তত চারবার অস্ত্র পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওই চালানগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশও ছিল।

সম্ভাব্য অভিযোগ ও পরবর্তী পদক্ষেপ

আইনজীবী মেনিয়ানোর মতে, এই জাহাজগুলো সত্যিই যদি অস্ত্র পরিবহনে জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে নিচের অভিযোগগুলো আনা যেতে পারে—

  • অস্ত্র চোরাচালান
  • অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা
  • আন্তর্জাতিক অপরাধে সহায়তা, যার মধ্যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধকালীন আইনে সুরক্ষিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপরাধ অন্তর্ভুক্ত

তিনি জানান, আমরা এখন মার্স্ক-এর স্পেন শাখা, এর ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্ট জাহাজচালকদের আচরণ নিয়ে আদালতের তদন্তে আছি। পাশাপাশি স্পেনের যে সব কর্তৃপক্ষ এই অস্ত্র পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও আইনি পদক্ষেপ বিবেচনায় আনা হচ্ছে।

আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের দাবি, স্পেন যেন অবিলম্বে ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের অস্ত্র বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং পরিবহন, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়গুলো কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বন্দরে আসা জাহাজগুলোর নিয়মিত পরিদর্শন নিশ্চিত করে।

সর্বশেষ