মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির মধ্যাঞ্চলে টানা তিন দিন ধরে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে রয়েছে বহু শিশু। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৬০ জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ থেকে ১২ মে পর্যন্ত ম্যান্ডালেই অঞ্চলের থাবিকন ও সিংকো শহর এবং সাগাইংয়ের চাউনি, উইলেট ও দেবাইয়িন এলাকায় এই হামলা চালানো হয়। এই এলাকাগুলো বর্তমানে বিরোধী দল ‘National Unity Government NUG’ এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক হামলাটি ঘটে সোমবার সকালে দেবাইয়িন শহরের উই থেইন কোয়িন গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে। সেখানে বিমান হামলায় অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থী নিহত হয় এবং গুরুতর আহত হয় প্রায় ৫০ জন।
একই দিন চাউনি শহরের মানচু গ্রামে আরেকটি হামলায় নিহত হন দু’জন এবং আহত হন সাতজন, যাদের মধ্যে ছিল মাত্র তিন মাস বয়সী একটি শিশু ও ১০ বছরের এক কিশোর।
চাউনি এলাকায় আরও দুটি হামলার খবর পাওয়া গেছে, তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি।
১০ ও ১১ মে উইলেট অঞ্চলের পাঁচটি স্থানে হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন, আহত হয়েছেন ৯ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক ১৩ বছর বয়সী শিশু। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েকজনের মরদেহ এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
থাবিকন ও সিংকোর কিয়াতাউকপক ও জারাবকিন গ্রামে ১০ মে’র হামলায় নিহত হন ছয়জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে দুই শিশু ছিল। পরদিন সাইককুইন গ্রামে হামলায় আহত হন আরও দুজন এবং দুটি বাড়ি ধ্বংস হয়।
ইয়াটওইক ও লাইবজি গ্রামে হামলায় একজন নিহত ও নয়জন আহত হওয়ার খবর মিলেছে।
এইসব হামলা চালানো হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন সামরিক সরকার মে মাসের শেষ পর্যন্ত অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। এটি ছিল মার্চের বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর তৃতীয় দফায় ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি। কিন্তু আগেরবারের মতো এবারও সেনাবাহিনী সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
ইতোমধ্যেই অন্তত তিনটি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে শতাধিক মানুষ হতাহত হয়েছেন।
এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের কিয়াউকফিউ, তাউংগুপ, কিয়াউকটাও, সিত্তউই ও পাউকটাউ শহরে চালানো হয়েছে ৪০০-র বেশি হামলা। এতে একজন নিহত এবং ২৮ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে কাচিন রাজ্যে চালানো হয়েছে ২০০-র বেশি বিমান হামলা, যাতে বহু বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
সম্প্রতি মোন রাজ্যের সীমান্তবর্তী একটি হাসপাতালেও বিমান হামলা চালিয়ে সেটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এই ধারাবাহিক হামলা মিয়ানমারের মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা চরমে পৌঁছেছে।
সূত্র: এএনএ