গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি এবং একটি পূর্ণাঙ্গ বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবিতে শনিবার রাতভর তেল আবিবে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক। এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘ইসরায়েলের প্রকৃত শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দাবি, হামাস নয়, বরং নেতানিয়াহু যুদ্ধ চালিয়ে বন্দিদের জীবন বিপন্ন করছেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রিজার্ভ সদস্য ও সাবেক কর্মকর্তারাও। তাঁরা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে মিছিল করেন, যুদ্ধবিরতি এবং অবিলম্বে সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।
গাজায় হামলা আরও বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের পর বন্দি পরিবারের আন্দোলন তীব্রতর হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বন্দি পরিবারের সংগঠন এক বিবৃতিতে জানায়, ‘নেতানিয়াহু এই যুদ্ধ শুধু নিজের রক্তাক্ত সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য চালাচ্ছেন।’ তাঁরা ইসরায়েলি নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সরকার পতনের দাবিতে রাস্তায় নামুন।’
সংগঠনটি আরও জানায়, গাজায় যুদ্ধের বিস্তারে বন্দিরা মৃত্যুর মুখে পড়ছেন, যা প্রমাণ করে যে সরকার তাদের নিয়ে আর চিন্তিত নয়।
‘জীবিত বন্দির সংখ্যা কমে আসছে, এটি বড় ধাক্কা’
ইসরায়েলি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক বন্দির বাবা বলেন, ‘জীবিত বন্দির সংখ্যা কমে আসছে—এই খবর আমাদের জন্য বিশাল ধাক্কা। এখনই যুদ্ধ থামানো উচিত।’ তাঁর আশঙ্কা, যুদ্ধ আরও বাড়লে বন্দিরা হয়তো হামাসের হামলার শিকার হবেন কিংবা ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে প্রাণ হারাতে পারেন।
একই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নিহত বন্দির বাবা জানান, তাঁর ছেলে ১০ দিন গাজায় একটি হাসপাতালে ছিলেন, সেখানেই মারা যান। তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ঘোষিত সামরিক অভিযানটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তিনি কেবল নিজের ক্ষমতা রক্ষার জন্য যুদ্ধ চালাচ্ছেন।’
আরেক মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির আত্মীয় শাই মোজেস বলেন, ‘হামাস নয়, নেতানিয়াহুই এখন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তিনিই দেশের ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন।’
এদিকে, সোমবার এক বক্তব্যে নেতানিয়াহু জানান, তাঁর নিরাপত্তা কেবিনেট গাজায় অভিযান আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাজা দখলের পরিকল্পনায় অটল।’
ইসরায়েলি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে গাজায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জন জীবিত। বিপরীতে, ইসরায়েলি কারাগারে ৯৯০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি আটক রয়েছেন, যাদের অনেকেই নির্যাতন, ক্ষুধা এবং চিকিৎসাসেবা না পেয়ে মারা গেছেন, একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এমন তথ্য দিয়েছে।
নেতানিয়াহুর ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন গাজায় চলমান অবরোধ ও হামলার কারণে আন্তর্জাতিক মহল ক্রমবর্ধমান মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে। গত ২০ মাসে ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া, ১১ হাজারের বেশি মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সূত্র: আল–জাজিরা