মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

নির্বাচনী সুবিধার জন্য যুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন মোদি: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

নির্বাচনী সুবিধার জন্য যুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন মোদি: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
নির্বাচনী সুবিধার জন্য যুদ্ধ উসকে দিচ্ছেন মোদি: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্তে টানাপোড়েন এবং গুলিবিনিময় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল, যা গত বুধবার ভোরে হঠাৎ করে ভয়াবহ রূপ নেয়। নয়াদিল্লি একযোগে পাকিস্তানের একাধিক এলাকা—বিশেষ করে কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তে—বিমান হামলা চালায়।

ইসলামাবাদ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের মধ্যে শিশুদেরও পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫৭ জন।

আল–জাজিরা নেট-কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ স্পষ্ট করে বলেন, ভারত যে কায়দায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছে, পাকিস্তানও ঠিক সেভাবেই জবাব দেবে। তাঁর মতে, ভারতের এই হামলা দুই দেশের মধ্যে এক পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের স্পষ্ট উসকানি।

তিনি জানান, কাশ্মীরের ভারত-নিয়ন্ত্রিত অংশে পেহেলগাম দুর্ঘটনায় প্রায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তান প্রথম থেকেই নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে এসেছে। অথচ নয়াদিল্লি এখন যে অভিযোগ তুলছে—পাকিস্তানের ভূখণ্ডে নাকি সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে, তাই তারা সেখানে হামলা চালিয়েছে—এই দাবিকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন তিনি।

আপনারা কী মনে করছেন—ভারতের সঙ্গে এই উত্তেজনা কোথায় গড়াবে?

প্রথমত, গত রাতে যা ঘটেছে, তাতে যদি পরিস্থিতি এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারে। এতদিন সংঘাত সীমাবদ্ধ ছিল কেবল কাশ্মীর অঞ্চলে—যেখানে নিয়ন্ত্রণ রেখা রয়েছে, এবং সীমান্তও আলাদা। কিন্তু এবার তারা আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের শহরগুলোতে হামলা চালিয়েছে। এটা একরকম সরাসরি যুদ্ধের আহ্বান।

দ্বিতীয়ত, বলা হচ্ছে আমাদের মাটিতে কিছু গোষ্ঠী ছিল, যাদের লক্ষ্য করে ভারত হামলা চালিয়েছে—এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

আমরা আজ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা এসব জায়গা পরিদর্শন করেছে, এবং আগামীকালও করবে। আমরা চাই বিশ্ব গণমাধ্যম নিজেরাই গিয়ে দেখে আসুক, ভারতের সব দাবি যে ভিত্তিহীন, তা নিজের চোখে প্রমাণ করুক। ভারতের বেলগাঁও শহরের ঘটনা নিয়েও আমরা একই কথা বলেছি।

আমরা আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। যদি কোথাও আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকে, তাহলে নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোনো তদন্ত কমিটি এসে তা যাচাই করুক—তা হোক বেলগাঁওয়ে বা পাকিস্তানে—আমরা সবাইকে স্বাগত জানাবো। আমরা তাদের কাছে সমস্ত তথ্য উন্মুক্ত করে দেবো, যেন সত্যটা বেরিয়ে আসে।

পাকিস্তান যে ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে এবং সৈন্য আটক করেছে, এর মাধ্যমে নয়াদিল্লিকে কী বার্তা দেওয়া হলো?

এটা খুবই স্পষ্ট একটি বার্তা—আমাদের ভূখণ্ডে হামলা হলে, সেটা যেখান থেকেই আসুক না কেন, আমরা চুপ করে থাকবো না। এমনকি যদি তারা নিজেদের আকাশসীমা থেকেই গোলাবর্ষণ করে, তারা যখন আমাদের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়—তখন আমরাও সমানভাবে জবাব দেবো। যদি আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে হামলা হয়, তাহলে পাল্টা জবাবও আসবে সীমান্ত পেরিয়ে।

অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই সংকট পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত গড়াতে পারে। আপনি কি তা মনে করছেন?

না, আমি তেমন আশঙ্কা করছি না। আমরা ভারতের বহু পরে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করেছি। সেটাও করেছি আত্মরক্ষার জন্য—যাতে যদি কখনো ভারত আমাদের আক্রমণ করে, আমাদের এমন একটা শক্তি থাকে যা তাদের এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে কয়েকবার ভাবতে বাধ্য করে। আমাদের এই ক্ষমতা মূলত প্রতিরোধের হাতিয়ার।

আপনারা কী মনে করেন, ভারত কেন এই উত্তেজনা বাড়িয়ে চলেছে? এটি কি কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার প্রতিক্রিয়ায়, যেখানে ২৫ জন ভারতীয় নিহত হয়েছিলেন?

আমার মনে হয়, এটির মূল কারণ ভারতের বর্তমান সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থ। দেশজুড়ে, বিশেষ করে বিহার রাজ্যে এখন নির্বাচন চলছে—যা ভারতের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত একটি রাজ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখনই মনে করেন তার জনপ্রিয়তা হুমকির মুখে, তখনই তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো না কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে শিশু মনে করলে ভুল করবে। আমরা একই ভাষায় জবাব দেব। যদি তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়, তাহলে এর উপযুক্ত মূল্য তাদের দিতে হবে।

এই উত্তেজনা কী প্রভাব ফেলতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

এটি নিঃসন্দেহে একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি। আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই—ভারত এর আগেও এমন দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আমরা চাইনি। তাই আমরা শুরু থেকেই বলেছি এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী তদন্তের প্রস্তাবও দিয়েছেন। কিন্তু শুধু অভিযোগ করলেই হবে না, প্রমাণ দিতে হবে।

যদি অভিযোগকারীর পক্ষেই সমাধান খুঁজে বের করার সদিচ্ছা না থাকে, তাহলে অভিযোগের কোনো মানে থাকে না। এখনো পর্যন্ত পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ভারত উপস্থাপন করতে পারেনি। ইতিমধ্যে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।

এই মুহূর্তে কি যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনো মধ্যস্থতা চলছে?

আমরা চাই আন্তর্জাতিক সমাজ হস্তক্ষেপ করুক, যাতে এই সংঘাত আর বাড়তে না পারে। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এ বিষয়ে সচেতন হওয়া—কীভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করছেন। তাই এখন সবারই উচিত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা।

সর্বশেষ