২০০১ সালে আমেরিকা তার মিত্রদের নিয়ে তথাকথিত ‘সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ’ ঘোষণার মাধ্যমে আফগানিস্তান আক্রমণ করে। মুখে ছিল মানবাধিকার, নারীর অধিকার, গণতন্ত্র আর প্রজাতন্ত্র কায়েমের কথা। কিন্তু বাস্তবে তারা যে আগ্রাসন চালিয়েছে, তা ছিল নির্মম, অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন।
এই দীর্ঘ বিশ বছরের দখলদারিত্বে তারা নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করেছে, অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, গ্রাম ও শহর ধ্বংস করেছে, হাজারো মানুষকে ভয়ংকর জেলে বন্দি রেখে নির্যাতন করেছে। অর্থনীতি ধ্বংস হয়েছে, এবং আগের যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান আরও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
তবুও আফগান জনগণ হাল ছাড়েনি। আল্লাহর কৃপায়, তালেবানের নেতৃত্বে তারা একটানা বিশ বছর প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অবশেষে ২০২১ সালের আগস্টে দখলদার আমেরিকা ও তার সহযোগীদের দেশ থেকে বের করে দিতে সক্ষম হয়। এটা ছিল স্বাধীনতার সূর্যোদয়, নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে নেয়ার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
দখলদারদের হটিয়ে দিয়ে তালেবান আফগানিস্তানে একটি নতুন সরকার গঠন করে। এ সরকার কোনো দেশের প্রতি হুমকি নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে। আফগানিস্তান দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে যে যুদ্ধ ও বিশৃঙ্খলায় জর্জরিত ছিল, তা থেকে দেশকে বের করে আনার পথে আমিরাত বড় এক অগ্রগতি করেছে।
তারা পররাষ্ট্রনীতিতে ‘না হস্তক্ষেপ করি, না হস্তক্ষেপ সহ্য করি’ — এই নীতি গ্রহণ করে সফলভাবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে, বিশেষ করে চীন, রাশিয়া ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে। প্রায় চার বছর ধরে তালেবান এই নীতিতেই সরকার চালিয়ে এসেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রায় সব শর্তই তারা পূরণ করেছে। এমনকি যারা ২০ বছর ধরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তাদের জন্যও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে — যা আধুনিক ইতিহাসে বিরল। আগের সরকারের প্রায় ১০ লাখ কর্মচারীকেও চাকরিতে রেখেছে, বেতন দিচ্ছে, তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছে।
রাজনৈতিকভাবে তারা প্রতিবেশীসহ অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেছে। ইসলামি শরিয়াহ ও জাতীয় স্বার্থের আলোকে তারা যেকোনো দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে প্রস্তুত, এ বার্তাও বারবার দিয়েছে।
নারীর অধিকারেও তারা কাজ করেছে। ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন তৈরি করেছে এবং অন্যায়-অবিচার রোধে পদক্ষেপ নিয়েছে।
মাদকবিরোধী লড়াইতেও তালেবান অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। দখলদার আমেরিকা যে দেশে মাদক ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছিল, সেই দেশ থেকে আজ মাদক অনেকটাই নির্মূল হয়েছে। লক্ষাধিক মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দিয়ে সমাজে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ফ্রিজ করে রাখলেও, তালেবান দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রপ্তানি বেড়েছে, কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা, তালেবান কোনো বিদেশি চাপের কাছে মাথা নত করেনি। তারা ইসলামি আদর্শে অটল থেকেছে, শরিয়াহ বাস্তবায়ন করেছে এবং পশ্চিমা শর্ত-শাসনকে উপেক্ষা করে নিজের পথেই এগিয়েছে।
তাহলে কেন আন্তর্জাতিক সমাজ আজও তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না?
এর একটাই কারণ — তালেবান পশ্চিমা শর্ত ও আমেরিকার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেনি। তারা স্বাধীন, আদর্শভিত্তিক ও স্বকীয় পথ বেছে নিয়েছে। আর এটাই আজকের বিশ্বশাসকদের চোখে ‘অপরাধ’।
সূত্র: এইচ রেডিও