মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

রোহিঙ্গা সংকট ও আরাকানের বাস্তবতা : কী জানি না, কী জানা উচিত

রোহিঙ্গা সংকট, আরাকান আর্মি ও আরাকানের নানান বিষয় নিয়ে লিখেছেন মধ্যপ্রাচ্যের সম্পাদক খুবাইব মাহমুদ।
আরএসওর তিন সদস্য। এক্স থেকে নেয়া

আমার ধারণা, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি ও প্রশাসনিক মহলের খুব কম মানুষই রোহিঙ্গা সংকট ও আরাকানের মাঠপর্যায়ের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। আরও সরাসরি বললে, তেমন কিছুই জানেন না। এর কারণও আছে, তথ্যের উৎস একদম সীমিত, নাই বললেই চলে।

এদিকে উৎস হাতের নাগালে থাকলেও রোহিঙ্গা সংকট ও আরাকানের রাজনৈতিক পালাবদল ও বাস্তবতা সম্পর্কে বংলাদেশের মূলধারার কোন মিডিয়ারই বিশেষ কোন কাজ নাই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্ডিপেনডেন্টের করা প্রতিবেদন এরা অনুবাদ করে প্রকাশ করে। অথচ, হওয়ার কথা ছিলো উল্টো। এরপরও নির্লজ্জের মত এরা নিজেদের ‘সাম্বাদিক’ ভাবে। সাংবাদিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘অনুসন্ধান’ নিয়ে এদের এমন কোন প্রতিবেদন খোঁজে পাবেন না, যা বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়েছিলো। অবশ্য, এরা কেন আন্তর্জাতিক মিডিয়া হয়ে উঠতে পারে নাই, এর আলাপ আলাদা।

মূল আলাপে আসি।

আরাকানে বর্তমানে লড়াইরত তিনটা পক্ষ। আরাকান আর্মি, জান্তা সরকার, রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বলতে গেলে, আরাকান পুরোপুরি জান্তার হাতছাড়া। আরাকানের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বাকি কিছু এলাকা আছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হাতে। সূত্র বলছে, বাংলাদেশ-রাখাইন সীমান্তের ২০০/৩০০ কিলোমিটারের মত অঞ্চল এদের হাতে।

রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের মধ্যে আবার কয়েকটা দল। রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন ( আরএসও ), আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি ( আরসা), আরাকান ইসলামি মাহাজ।

এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো ও সংগঠিত দল হল আরএসও। এটার প্রতিষ্ঠা ১৯৮২ সালে। রাজনীতি, কূটনীতি এবং সামরিক দিক থেকে এরা খুবই ম্যাচিউর। এদের রাজনৈতিক শাখাও আছে। এছাড়া, ইসলামি মাহাজও পুরনো দল। এদের সাথে আরএসওর এলায়েন্স আছে। বাকি থাকে আরসা। এদের ব্যাপারে সংক্ষেপে বললে অনেকে চটে যাবেন। সামনে বিস্তারিত বলব। শুধু এটুকু জেনে রাখেন, আরাকানের স্বাধীনতাযুদ্ধে এদের কোন ফিউচার নাই।

রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের শত্রু দুইটা। আরাকান আর্মি ও জান্তা। আরাকান থেকে জান্তা সরে যাওয়ায়, এদের সাথে স্থলে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার মানে, আরাকানে সামনে সংঘর্ষ হবে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও আরাকান আর্মির মাঝে। যদি জান্তা নাক না গলায় আরকি। যদিও কূটনীতি বুঝলে জান্তার জন্য বুদ্ধির কাজ হবে, রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সাথে চুক্তি করে নেয়া। কারণ, রোহিঙ্গারা শুধু আরাকানই স্বাধীন করতে চায়। আর আরাকান আর্মি পুরো মায়ানামার। চিন, শান কাচিনসহ মিয়ানমারের অন্যান্য এলাকায় সক্রিয় বিদ্রোহীদের সাথে এরা স্ট্রংলি কানেক্টেড। তাই বেশি ক্ষতির থেকে অল্প ক্ষতিই ভালো।

আরাকান আর্মির সাথে ভারত, চিন ও বাংলাদেশের পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সম্পর্ক গলায় গলায়। গত মাসেই ভারত ১০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহযোগিতা দিয়েছে আরাকান আর্মি কে। আর চিন তো শুরু থেকেই দিয়ে আসছে। আরাকানে চিনের ১১ টা প্রজেক্টের ১০ টারই নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে। আরাকানে চিনের স্বার্থ আছে। কিন্তু ভারতের স্বার্থ কী? সেটা আরেক গুরুত্বপূর্ণ আলাপ। সামনে করব সময় পেলে।

রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আরাকান আর্মির মনোভাব কেমন? শুধু এটুকু বলি, এরা রোহিঙ্গাদের মনে করে, বাঙালি সন্ত্রাসী। গত ছয় মাসেই এরা ৩ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করেছে। খুন ও গুম,পাচার ও ধর্ষণের হিসাব আরও দীর্ঘ। পুরাটা দিতে গেলে লেখা তিনগুণ বড় হয়ে যাবে।

এখন বলেন, মানবিক করিডোর বসিয়ে ইউনুস আমাদের কী মূলা দেখাইতে চান? উপরে লেখাটা পড়ার পর আপনার কাছে রোহিঙ্গা সমাধানের একমাত্র পদ্ধতি কী মনে হয়?

চিন, আমেরিকা, রাশিয়া আর মায়ানমারের কান্ধে ভর করে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা যাবে না। আরাকান আর্মির মাধ্যমে তো সম্ভবই না। যদি ইউনুস সাবের রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের সত্যিকার সদিচ্ছা থাকে, তাহলে কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। আর যদি রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক এলিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করার অসৎ অভিপ্রায় থাকে, তাহলে ভিন্ন আলাপ। মনে হচ্ছে, ড. ইউনুস ওইদিকেই যাচ্ছেন।

এখন, সংকট সমাধানে বাংলাদেশের কী করা উচিত। কী করলে, রোহিঙ্গাদের মুক্তি মিলবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকবে। সেসব নিয়ে আরেকদিন বলব।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা