ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের হুমকি দিয়ে কড়া বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তবে বাস্তবতা হলো—এই আক্রমণ চালানো মোটেই সহজ নয়। কেবল ইচ্ছাশক্তি থাকলেই হয় না, থাকতে হয় সামর্থ্যও। আর ঠিক সেখানেই বড় ধাক্কা খাচ্ছে ইসরায়েল। কারণ, ইরানের মতো একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এককভাবে অভিযান চালানো কৌশলগত, সামরিক ও কূটনৈতিক—তিন দিক থেকেই অত্যন্ত জটিল।
সামরিক সীমাবদ্ধতা বড় বাধা
ইসরায়েল যদিও আঞ্চলিক সামরিক শক্তিতে এগিয়ে, তবু ইরানের গভীরভূমিতে ঢুকে কার্যকর বিমান হামলা চালানো তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া এসব লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট হামলা চালানোর মতো উন্নত অস্ত্র বা প্রযুক্তি ইসরায়েলের নেই। ফলে এককভাবে অভিযান চালাতে গেলে তা সীমিত ও ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
ভৌগোলিক চ্যালেঞ্জ আরও জটিল করে তোলে
ইসরায়েল থেকে ইরানের দূরত্ব ১৫০০ কিলোমিটারের বেশি। এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আঘাত হানতে গেলে প্রয়োজন হয় আকাশপথে জ্বালানি সরবরাহের সক্ষমতা, যা ইসরায়েলের একার পক্ষে করা কঠিন। ফলে দীর্ঘক্ষণ আকাশে টিকে থাকা বা একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা—দুটোই হয়ে পড়ে সীমিত।
ইরানের ছড়ানো পারমাণবিক কর্মসূচি
ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গড়ে তুলেছে। কোনো একটি স্থাপনা ধ্বংস করলেও মূল কর্মসূচি থেমে যাবে না। বরং তা সাময়িক ব্যাঘাত সৃষ্টি করলেও ইরান এরপর আরও গোপনে কৌশলগত অস্ত্র উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই যায়।
পুরোনো যুদ্ধবিমান, সীমিত সক্ষমতা
ইসরায়েলের বহরে থাকা অনেক যুদ্ধবিমানই তুলনামূলকভাবে পুরোনো এবং সীমিত জ্বালানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এতে বড় পরিসরে হামলা চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। একদিকে বিমানকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, অন্যদিকে বেশি সময় আকাশে থাকার সুযোগ নেই। এর ফলে নির্ভরযোগ্য ও ব্যাপক হামলা চালানো সম্ভব হয় না।
ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বেশি দরকার কৌশলগত সমর্থন
নেতানিয়াহুর ঘোষণাগুলো যতই আগ্রাসী হোক না কেন, বাস্তবতা হলো—যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া ইরানের মতো দেশের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রায় অভিযান চালানো ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব নয়। সাইবার হামলা, কৌশলগত বোমারু বিমান কিংবা আকাশে জ্বালানি সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া অভিযান হবে অসম্পূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ।
ইরানের পাল্টা জবাবের আশঙ্কা
ইসরায়েলের যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুমকি ইতোমধ্যেই দিয়েছে তেহরান। ইরানের প্রতিরোধ সক্ষমতা ও আঞ্চলিক প্রভাব এমন, যা ইসরায়েলকে সামরিক ও কৌশলগতভাবে বড় খরচে ফেলতে পারে। হামলা চালালে পাল্টা হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে একঘরে পড়ার ঝুঁকি
বড় শক্তিগুলোর স্পষ্ট সমর্থন ছাড়া ইরানবিরোধী হামলা চালালে ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক সংকটে পড়তে পারে। একক হামলা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক পরিসরে একঘরে করে তুলবে, যা ভবিষ্যতে তাদের জন্য রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অপরিহার্য
ইরানের বিরুদ্ধে সফল সামরিক অভিযান চালাতে হলে ইসরায়েলকে নির্ভর করতেই হবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। সাইবার হামলা, জ্বালানি সরবরাহ কিংবা কৌশলগত বোমারু বিমান ব্যবহারের মতো প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া এমন জটিল অভিযানে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়।
সূত্র : আমাদ