যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো আট দফা দাবির একটি চিঠি ঘিরে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে সিরিয়া। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও বিদেশি সম্পর্কের নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু জড়িয়ে আছে এসব দাবির সঙ্গে। চিঠির জবাবে দামেস্ক লিখিতভাবে নিজেদের অবস্থান ও আপত্তির কথা জানিয়েছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সফরের মধ্য দিয়ে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সাময়িকী আল-মাজাল্লা জানিয়েছে, তারা সিরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট তিনটি গোপন নথির বিষয়বস্তু দেখেছে। এসব নথিতে দামেস্ক ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্ভাব্য সমঝোতা এবং জাতিসংঘের ভূমিকার দিক-নির্দেশনা ফুটে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আট দফা দাবি
যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো ওই চিঠিতে সিরিয়ার কাছে আটটি প্রধান দাবি জানানো হয়েছে:
১. সেনাবাহিনী পুনর্গঠন: একটি পেশাদার সেনাবাহিনী গঠন করতে হবে এবং বিদেশি যোদ্ধাদের সংবেদনশীল ও নেতৃত্বের পদে বসানো যাবে না।
২. রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে স্বচ্ছতা: সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র কর্মসূচি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব স্থাপনায় মার্কিন কর্মকর্তাদের পূর্ণ প্রবেশাধিকার দিতে হবে।
৩. নিখোঁজ মার্কিন নাগরিক: নিখোঁজদের খোঁজে একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে, যার মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত সাংবাদিক অস্টিন টাইসের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
৪. আইএস পরিবারের হস্তান্তর: উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার আল-হোল শিবিরে থাকা আইএস সদস্যদের পরিবারের সদস্যদের মার্কিন হেফাজতে হস্তান্তর করতে হবে।
৫. আন্তর্জাতিক জোটে সহযোগিতা: আইএস বিরোধী আন্তর্জাতিক জোটের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান: সিরিয়ার ভূখণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর অনুমতি দিতে হবে, যদি ওয়াশিংটন মনে করে কোনো পক্ষ তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
৭. ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী নিষিদ্ধ: সিরিয়ায় অবস্থানরত সব ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ও তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে এবং সদস্যদের বহিষ্কার করতে হবে—ইসরায়েলের উদ্বেগ প্রশমনের অংশ হিসেবে।
৮. ইরানি প্রভাব নিয়ন্ত্রণ: সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপস্থিতি বন্ধ করতে হবে এবং ইরানি রেভল্যুশনারি গার্ডকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
দামেস্কের প্রতিক্রিয়া: সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপত্তি
সিরিয়া এই চিঠিকে ‘হতাশাজনক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আল-মাজাল্লা-এর বরাতে জানা যায়, দামেস্কের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে—চিঠিতে এমন কিছু দাবি রয়েছে যা সরাসরি দেশটির সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করে। এসব শর্ত গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছে সিরীয় সরকার।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে লিখিত জবাব পাঠিয়েছে। সেখানে কিছু দাবির ব্যাপারে স্পষ্ট আপত্তি জানানো হয়েছে এবং দামেস্কের সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথাও জানানো হয়েছে। এখন ওয়াশিংটন ওই জবাব পর্যালোচনা করছে।
সিরিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতা ও সফর
যুক্তরাষ্ট্রের দাবিপত্র ও কূটনৈতিক চিঠি বিনিময়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছে দামেস্ক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানির নেতৃত্বে একটি সরকারি প্রতিনিধি দল নিউইয়র্ক সফরে যাচ্ছে। দলটি আগামী শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সিরিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবে।
অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আর্থিক প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে অবস্থান করছে। তারা সেখানে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নিচ্ছে।
জাতিসংঘের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা
জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর একটি নথি অনুযায়ী, সিরিয়ান রাষ্ট্র ও এর নেতাদের প্রায় ৫০ কোটি ডলারের সম্পদ বিদেশে জব্দ অবস্থায় রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউএনডিপি চাইলে সিরিয়া ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী এবং সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করতে পারে—যাতে এসব সম্পদ ফিরে আনার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে অগ্রগতি
পশ্চিমা কূটনীতিকদের মতে, সিরিয়া ইতিমধ্যেই রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস ও নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, এখনো সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা অর্জিত হয়নি।
সূত্র: আশ-শারক