মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

লিবিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের তদন্তের দাবি

লিবিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক বিরোধী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের অপহরণ এবং বেআইনি আটক নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন লিবিয়ায় স্বাধীন তদন্ত এবং জবাবদিহির ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ‘লইয়ার্স ফর জাস্টিস ইন লিবিয়া’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনজীবী কমিশন’ এক যৌথ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে অপরাধীরা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে, যা দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলবে।

২০২০ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল লিবিয়ায় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তের জন্য একটি তথ্য-উদ্ধার মিশন গঠন করে। ওই মিশন ২০১৬ সালের পর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে। দুই বছর আগে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে একটি স্থায়ী আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে, নারী, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, শরণার্থী ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা ব্যাপক দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছেন। এসব লঙ্ঘনের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি ত্রিপোলি ও পূর্ব লিবিয়ায় রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের ব্যক্তিদের অপহরণ এবং বেআইনি আটক বেড়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে মোহাম্মদ আল-কামাতি, মিফতাহ মাসউদ ও আইনজীবী মোহাম্মদ আল-তুমি-সহ বেশ কয়েকজনকে অপহরণ করা হয়েছে। এর আগে সংসদ সদস্য সিহাম সারকিউয়া ও ইব্রাহিম আদ্রিসিও নিখোঁজ হন।

রাজনৈতিক দল ও জোটের সমন্বয়কারী সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, অপহরণ ও বেআইনি আটক বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তারা অপহৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি ও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তুলেছে।

লিবিয়ার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত, রাষ্ট্রদূত রিচার্ড নরল্যান্ড। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের লিবিয়া মিশনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একমত বেআইনি আটক ও অপহরণের ঘটনা গভীর উদ্বেগজনক। তিনি অন্যায়ভাবে বন্দী ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।

লিবিয়ার ত্রহুনা শহরের গণকবরগুলো থেকে ২০২০ সালের পর থেকে অন্তত ৩৫৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় গুরুতর অপরাধের প্রমাণ এবং লিবিয়ায় বিচারহীনতার উদাহরণ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই বিচারহীনতা অব্যাহত থাকলে লিবিয়ার ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন লিবিয়ার জন্য একটি স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত ব্যবস্থা গড়ে তোলে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করা গেলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই চক্র চলতেই থাকবে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা