মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

হামাসকে সমর্থনের অভিযোগে তুরস্কের এক তরুণীকে আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্র

হামাসের সমর্থনে বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি তুরস্কের নাগরিক রুমাইসা ওজতুর্ক নামক এক তরুণীকে আটক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ওজতুর্ক যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির লাস্ট ইয়ারের শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার রাতে মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে সমারভিল শহরের বাসা থেকে আটক করেন। তিনি একটি ইফতার অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এজেন্সির ছয়জন সদস্য ও কিছু অপরিচিত মুখোশধারী ব্যক্তি রুমাইসা ওজতুর্ককে ঘিরে ধরেছে এবং জোরজবরদস্তি করে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিচ্ছে । ফুটেজে ওজতুর্কের হাত পেছনে বাঁধার সময় তার প্রতিবাদী কণ্ঠও শোনা গেছে।

অভিযোগ কী
আমেরিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ওজতুর্ক স্টুডেন্ট ভিসা বাতিল করার মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিল।

তিনি আরও জানান, তিনি একজন তুর্কি নাগরিক এবং টাফটস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থী। শুধুমাত্র স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমেই তার এই দেশে থাকার বৈধতা রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এজেন্সির তদন্তের পর জানা গেছে, ওজতুর্ক হামাসের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলো। অথচ তাদের মতে, হামাস মার্কিন-বিরোধী একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডেন্ট ভিসা কোনো অধিকার নয়, বরং বিশেষ একধরনের অনুমতি। তিনি আরও বলেন, হামাসের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ওজতুর্কের ভিসা বাতিল পর্যন্ত হতে পারে।

যা হতে পারে
ওজতুর্কের আইনজীবী মাহসা খানবাবাই একটি লিখিত বিবৃতিতে জানান, ওজতুর্কের বৈধ স্টুডেন্ট ভিসা রয়েছে। তারপরও মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে তার বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে যাওয়ার সময় আটক করা হয়।

তিনি বলেন, ওজতুর্ককে কোথায় আটক রাখা হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। এদিকে এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি।

অন্যদিকে টাফটস বিশ্ববিদ্যালয় একটি বিবৃতিতে জানায়, ওজতুর্কের আটক সংক্রান্ত কোন প্রতিবেদন বা সংবাদ তারা পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তুর্কি শিক্ষার্থীরা বলছে, ওজতুর্কের সাথে কোনোভাবেই তারা যোগাযোগ করতে পারছে না। পরিবারের সাথেই তার সর্বশেষ কথা হয়েছিল।

ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ
সহপাঠী ওজতুর্কের জন্য ইউনিভার্সিটির অধিকাংশ ছাত্রই উদ্বিগ্ন। তারা জানায়,‘কানারি মেশিন’ নামক একটি সাইট ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের তথ্য ফাঁস করছে। কিছুদিন আগে সেই সাইটে ওজতুর্কের ব্যক্তিগত তথ্যও ফাঁস করা হয়েছিল।

আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বক্তব্যে বলেছেন, ওজতুর্কের গ্রেফতার নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের একটি উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন সমর্থকদের গ্রেফতার করার কারণে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেছেন।

ওয়ারেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আইনানুগভাবে বৈধ ছাত্রদের টার্গেট করছে এবং কোনো আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই তাদের কে কমিউনিটি থেকে অপসারণ করছে। তিনি এটাকে মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন।

শুধুই কি ওজতুর্ক
যুক্তরাষ্ট্রে এধরনের ঘটনা নতুন নয়। ইতিপূর্বে অহরহ এমন ঘটনা ঘটেছে। ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনের সমর্থক ছাত্র এবং শিক্ষাবিদদের প্রতিনিয়ত হেনস্থা করেই যাচ্ছে। এর আগে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র মাহমুদ খালিলকে গ্রেফতার করা হয় । একইভাবে জর্জ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় গবেষক বদর খান সোরি ‘হামাস প্রচার এবং অ্যান্টি-সেমিটিক’ বক্তব্যের অপরাধে নির্বাসনের শাস্তি পান। পরবর্তীতে বিচারক প্যাট্রিসিয়া টোলিভার গাইলস সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলেন।

এদিকে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে শুরু হওয়া ‘সাপোর্ট প্যালেস্টাইন’ বিক্ষোভ আমেরিকার ৫০টির অধিক ইউনিভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এপর্যন্ত মার্কিন পুলিশ ৩১০০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে— যাদের অধিকাংশই ছাত্র এবং শিক্ষক।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা