মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

সুদানে সেনাবাহিনীর পুনরুদ্ধার করা অঞ্চলগুলোর চিত্র

প্রায় দুই বছর র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) মিলিশিয়া বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা খার্তুমের বেশ কয়েকটি এলাকা সম্প্রতি সুদানি সেনাবাহিনী মুক্ত করেছে। তবে এসব অঞ্চল পুনরুদ্ধারের পর সেখানে ব্যাপক লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

মুক্ত হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে খার্তুমের মধ্যাঞ্চল অন্যতম। এটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। এই এলাকায় বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সুপারশপ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিনোদন কেন্দ্র ছিল। তবে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত এই অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের মতে, আরএসএফের দখলকালে পুরো এলাকার দোকানপাট, বিশেষ করে ব্যাংক ও বাজারগুলো ব্যাপক লুটপাটের শিকার হয়। শহরের বিখ্যাত গোল্ড মার্কেটসহ ১০টিরও বেশি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান লুটপাটের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

খার্তুমের মধ্যাঞ্চলের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য টাওয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে, যেগুলোর মালিকানা ছিল সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতের। সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে নীল পেট্রোলিয়াম টাওয়ার, আল-ফাতিহ টাওয়ার, মেরিডিয়ান হোটেল, আল-কাবির হোটেল, ইওয়া টাওয়ার ও বিলোস টাওয়ার। এই ভবনগুলো একসময় খার্তুম শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো।

সুদানি সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আল-জাজিরাকে জানান, শহরের মাকরন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন টাওয়ারে আরএসএফ স্নাইপাররা অবস্থান করত। এসব স্থানে ভারী আর্টিলারি বসিয়ে সেনাবাহিনীর প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। এমনকি কিছু টাওয়ার থেকে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরের দিকে বোমা হামলাও চালানো হয়।

শুধু ভবন বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভয়াবহ। আল-জাজিরা নিশ্চিত করেছে, সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সাহারা ব্যাংক, ফয়সাল ইসলামী ব্যাংক, উম্মে দুরমান ন্যাশনাল ব্যাংক, সেভিংস ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া, খার্তুম শহরের হাসপাতালগুলোর অবস্থাও ভিন্ন নয়। বহু হাসপাতাল ধ্বংস ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং কোষাগারে থাকা অর্থ লুট করা হয়েছে। এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, কিছু হাসপাতাল তাদের যাবতীয় সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়ে পশ্চিম সুদানের দারফুর অঞ্চলে স্থানান্তর করেছে।

সেনাবাহিনীর আরও এক কর্মকর্তা জানান, খার্তুম শহরের পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি হাসপাতাল থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ভারী অস্ত্র ও স্নাইপারের ব্যবহার করা হয়েছিল। এসব হামলায় বহু সেনা সদস্য হতাহত হন।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধের শুরুতে যখন আরএসএফ আল-মাকরন অঞ্চল দখল করে নেয়, তখন স্থানীয়দের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, এই উচ্ছেদের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেখানে অবস্থানরত আরএসএফের সহকারী প্রধান আব্দুর রহিম দাগলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা