ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফিরে আসার পর, চরমপন্থী টেম্পলপন্থীরা রমজানের শেষ দশক এবং ঈদুল ফিতরের দিন আল-আকসা মসজিদ ইহুদি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি তুলেছে। এই দাবি ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের নীতির পরিপন্থী, কারণ ঐ সময় ইহুদিদের মসজিদে প্রবেশ পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।
ইসরায়েলের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ‘তুফানুল আকসা’ অভিযানের পর এই ধরনের সিদ্ধান্ত শত্রুদের কাছে সরকারের আত্মসমর্পণের বার্তা হিসেবেই প্রতিভাত হচ্ছে।
সাবেক কনিসেট সদস্য এবং ‘জেহুত’ পার্টির নেতা মোশে ফিগলিন বলেন, রমজান মাসে ইহুদিদের আল-আকসায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সরকারের দুর্বলতারই প্রমাণ। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘যদি মন্ত্রী বেন গভির এই বিষয়টিকে যুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করতেন—যেভাবে শত্রুপক্ষ একে দেখছে—তাহলে সরকারের প্রতি তার ফিরে আসার শর্ত হিসেবে টেম্পল মাউন্টে ইহুদিদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তোলা উচিত ছিল।’
চরমপন্থী সংগঠন ‘বাইডেনু’ (Baydenu)-এর প্রধান টম নিসানি তার ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার টেম্পল মাউন্টে ইহুদি প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সন্ত্রাসীদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করছে। পরিস্থিতি শান্ত থাকা সত্ত্বেও এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ অযৌক্তিক। বেন গভির চাইলে মন্ত্রিসভায় ফিরে আসার শর্ত হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি তুলতে পারতেন, যেমন তিনি অন্য বিষয়গুলোতে করেছেন। কারণ তিনি নির্ভয়ে নিজের মত প্রকাশ করেন।’
আরেক সাবেক কনিসেট সদস্য ইয়াহুদা গ্লিক বলেন, সরকারের উচিত ইহুদি দর্শনার্থীদের জন্য টেম্পল মাউন্টে প্রবেশের সময় সীমিত করে দেওয়া এবং মুসলমানদের উপস্থিতি কম থাকলে সেই সময় ইহুদিদের প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করা।
টেম্পলপন্থী নেতা আসাফ ফ্রিড তার ফেসবুক পোস্টে আল-আকসায় তারাবির নামাজ আদায়রত হাজারো মুসল্লির ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘জাতীয় দুর্বলতার কারণে আগামী দুই সপ্তাহ মসজিদ আল-আকসা ইহুদিদের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব মুসলমানরা রমজানের শেষ দশকের রাতে আল-আকসায় বিপুল সংখ্যায় জমায়েত হন। এর ফলে ইহুদিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বাধ্য হয়ে টেম্পল মাউন্ট বন্ধ রাখে। কারণ, আরবরা ইহুদিদের আকসায় প্রবেশকে বিদ্বেষের দৃষ্টিতে দেখে।
ইতামার বেন গভির মন্ত্রিত্ব গ্রহণের পর থেকেই চরমপন্থী মন্দিরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার নির্দেশনায় নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় এসব গোষ্ঠী আক্রমণ চালাচ্ছে এবং ইহুদি বসতিগুলিতে মুক্তভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে—যেন আল-আকসা মসজিদ একটি ইহুদি উপাসনালয়ে রূপ নিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বেন গভির আল-আকসায় চারবার প্রবেশ করেছেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মোট সাতবার তিনি সেখানে গেছেন।
এর আগেও, ২০২২ সালের ২৬ আগস্ট এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বেন গভির জানিয়েছিলেন, তিনি আল-আকসায় একটি টেম্পল মাউন্ট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার নীতিমতে, টেম্পল মাউন্টে ইহুদি ও মুসলিমদের প্রার্থনার সমান অধিকার থাকা উচিত। আমি যদি পূর্বে আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারতাম, তবে আজ সেখানে ইসরায়েলের পতাকা উড়ত।’
সূত্র: আল-জাজিরা
