১০ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলি বাহিনী শাহলা হাম্মাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। পশ্চিম তীরের সিলওয়াদ অঞ্চলের এই বাড়িতে দখলদার সেনারা অতর্কিত অনুপ্রবেশ করে, ঘরের আসবাব ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এমনকি তার দুই শিশু সন্তান আব্দুর রহমান ও মুহাম্মদের খেলনাও সেনাদের বুটের নিচে পিষ্ট হয়।
শাহলা আল-জাজিরাকে জানান, ‘দ্বিতীয়বার যখন তারা আসে, আমি প্রতিবাদ করে বলি— তোমরা আগেরবারই সব তছনছ করে দিয়েছো। সঙ্গে সঙ্গে তারা বন্দুক তাক করে আমাকে শাসিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।’

দুই দফা অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা শাহলা ও তার পরিবারের সবাইকে বাড়ির উঠোনে জড়ো করে রাখে। তাদের চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর পুরো বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে সৈন্যরা একে একে পরিবারের সদস্যদের ছবি তোলে এবং চলে যায়।
প্রথম দফায় শাহলার পাশের দুটি বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। কিন্তু দ্বিতীয়বারের অভিযানে প্রায় ৩০টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্যবিহীন অভিযান চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফিলিস্তিনি বন্দী বিষয়ক সংগঠনের মুখপাত্র আমানি সারহানেহ আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আগে এসব অভিযান মূলত মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য পরিচালিত হতো। কিন্তু এখন এসব অভিযানের একমাত্র উদ্দেশ্য সাধারণ জনগণকে হয়রানি করা।’
সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, হামাস-ইসরায়েল বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরাই এখন দখলদার বাহিনীর প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। বিশেষ করে পশ্চিম তীরের ফাওয়ার, দুহাইশা ও আরুব অঞ্চলের বাসিন্দারা প্রতিদিন এমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কোনো কারণ ছাড়াই একই বাড়িতে দিনে একাধিকবার তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দখলদার বাহিনী বুঝিয়ে দিতে চায় গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের তুলনায় পশ্চিম তীরের বাসিন্দারাও বেশি নিরাপদ নয়।
সর্বশেষ, রমজান মাসের শুরুতেই ইসরায়েলি সেনারা শহরের ৩০টির বেশি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
টাউন কাউন্সিলের প্রধান রাফাত খালিফা বলেন, ‘এমন অভিযানে গ্রামের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ হয়রানির শিকার হন। এগুলো নিছক নিপীড়নমূলক অপারেশন, যার একমাত্র লক্ষ্য সাধারণ জনগণকে অপদস্থ করা ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া।’
পশ্চিম তীরে পরিচালিত এসব অভিযানে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছে দখলদার বাহিনী।
সম্প্রতি আজুন গ্রামে পরিচালিত অভিযানে অংশ নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিশাল একটি দল। দীর্ঘ সময় ধরে তারা বাড়ি-ঘরে তল্লাশি চালায়, ব্যাপক ধরপাকড় করে। আটককৃত ব্যক্তিদের কিছুক্ষণ আটকে রেখে হয়রানি করার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে কুফর না’মা অঞ্চলে মাঝরাতে ঝটিকা অভিযান চালানো হয়।
আল-কুদস সেন্টার ফর লিগাল অ্যাডভাইস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের প্রধান আসেম আরুরীর মতে, এসব অভিযান শুধু ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্যই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।
আরুরী বলেন, ‘আগের অভিযানের তুলনায় সাম্প্রতিক অভিযানে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সেনাদের এখানে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তারা চুরি করছে, নির্মমভাবে নিরপরাধ মানুষদের মারধর করছে এবং অবাধে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এগুলো ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনার অংশ। ইসরায়েল চায়, সাধারণ মানুষ এসব নিপীড়নের মুখে টিকে থাকতে না পেরে একসময় নিজ থেকেই চলে যাক।’
সূত্র: আল-জাজিরা