গাজার মানুষদের জন্য রমজান শুধু ইবাদতের মাস নয়, এটি ধৈর্য ও আশারও প্রতিফলন। যুদ্ধ, অবরোধ ও মানবেতর জীবনযাপনের মধ্যেও অনেকে চেষ্টা করেন পরিবারে কিছুটা আনন্দ ফিরিয়ে আনতে। ঠিক তেমনই এক চেষ্টা করছেন গাজার জাইতুন মহল্লার বাসিন্দা আবু আনাস কাশকো।

ইসরায়েলের হামলায় বহু ফিলিস্তিনির মতো আবু আনাস ও তাঁর পরিবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। আট সদস্যের এই পরিবার মাসের পর মাস কাটিয়েছেন একটি ছোট তাঁবুর নিচে, যেখানে ছিল না পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি কিংবা ন্যূনতম নিরাপত্তা। আবু আনাস বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার অকল্পনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটিয়েছি। তাঁবুর ভেতর অসহনীয় গরম, খাবারের সংকট—সব মিলিয়ে অবস্থা ছিল ভয়াবহ।’
যুদ্ধ যখন কিছুটা স্তিমিত হলো, তখনই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে বাড়িটি আদৌ অক্ষত আছে কি না, তা নিয়েও ছিল শঙ্কা। অবশেষে ফিরে গিয়ে দেখেন, তাঁদের ঘরটি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছে। সে মুহূর্তের অনুভূতি বর্ণনা করতে গিয়ে আবু আনাস বলেন, ‘বাড়িতে ঢোকার পর আমাদের চোখ আনন্দে ভরে ওঠে। পরিবারের সবাই সিজদায় পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি।’

যদিও বাড়ি ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু অবরোধ ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গাজার মানুষের জীবনযাপন এখনো কঠিন। চাকরির সুযোগ নেই, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া, এমন পরিস্থিতিতেও তিনি চেয়েছেন সন্তানদের জন্য কিছুটা আনন্দ নিয়ে আসতে।

রমজানের শুরুতে তিনি ঠিক করেন, যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি ভুলিয়ে শিশুদের জন্য কিছু করবেন। কিন্তু কীভাবে? হাতে ছিল না পর্যাপ্ত টাকা। তখনই মাথায় আসে অভিনব এক ধারণা—ত্রাণের খাবারের খালি ক্যান দিয়ে তিনি তৈরি করলেন রঙিন ফানুস। এই সামান্য উদ্যোগেই আনন্দে ভরে ওঠে তাঁর সন্তানের মুখ।

গাজার বাস্তবতা কঠিন হলেও মানুষের মনোবল অটুট। আবু আনাসের মতো অনেকেই চরম দুঃসময়েও খুঁজে নিচ্ছেন আশার আলো। তাঁর তৈরি ফানুসটি শুধু একটি বাতি নয়, এটি ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম, টিকে থাকার শক্তি ও জীবনের প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন।
সূত্র: আল জাজিরা