সিরিয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের জেরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাতাকিয়া ও হিমস প্রদেশে কারফিউ জারি করেছে নতুন প্রশাসন।
সিরিয়ার সাধারণ নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিমসে কারফিউ থাকবে। লাতাকিয়া ও আশপাশের এলাকায় রাত ১০টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পলাতক বাশার আল-আসাদের অনুগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে লাতাকিয়া ও জাবলাহ অঞ্চলে এই অভিযান শুরু হয়।
অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সিরিয়ার প্রধান শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, দামেস্ক, হিমস, হামা, আলেপ্পো, দারা, দেইর আয যোর ও বোকামালে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
দামেস্ক ও আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে সরকারের প্রতি সমর্থন জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
হামায় তারাবির নামাজের পর হাজারো মানুষ রাজপথে নেমে আসেন এবং বিদ্রোহীদের দমন অভিযান চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানান। একইভাবে দেইর আয যোর, হিমস ও আলেপ্পোতেও জনগণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে আল-জাজিরা বিশেষ নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পলাতক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়ায় সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
সূত্র জানায়, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা গিয়াস দাল্লা বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি হিজবুল্লাহ ও ইরাকি মিলিশিয়াদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন এবং সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (SDF)-এর মাধ্যমে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছেন।
এছাড়া দাল্লা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাবেক নেতাদের সঙ্গে মিত্রতা গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে তিনি লাতাকিয়ার রিফ কুতলি অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মাহের আসাদের পক্ষে কাজ করছেন।
সূত্র আরও জানায়, মাহের আসাদ বুধবার ইরাক ছেড়ে রাশিয়ায় বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন।
অভিযানের অংশ হিসেবে সাবেক বিমান বাহিনী গোয়েন্দা প্রধান ইব্রাহিম হুওয়াইজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
লাতাকিয়ায় বিদ্রোহীদের হামলা প্রতিহত করেছে সেনাবাহিনী, যেখানে একজন হামলাকারী নিহত এবং তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিদ্রোহীদের হামলায় ১৫ সেনাসদস্য নিহত হন।
সূত্র জানায়, লাতাকিয়ায় সক্রিয় বিদ্রোহীদের মধ্যে কিছু যুদ্ধাপরাধী রয়েছে, যারা সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার সুহাইল হাসানের অনুগত। বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তা বাহিনী এই অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
