মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজায় যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, ইসরায়েলে চুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভেন উইটকভ আগামী সপ্তাহে ইসরায়েল সফরে আসবেন। তার সফরের মূল লক্ষ্য হবে যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা এবং চুক্তির বাস্তবায়নে অগ্রগতি পর্যালোচনা করা।

এদিকে, চুক্তির পক্ষে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ৭০টিরও বেশি স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু শনিবার সন্ধ্যায় শীর্ষ পর্যায়ের এক বৈঠকে বসেন, যেখানে গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইসরায়েল টুডে জানিয়েছে, এই বৈঠকের অন্যতম উদ্দেশ্য কায়রোয় আলোচনায় অংশ নিতে যাওয়া ইসরায়েলি প্রতিনিধিদের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল নির্ধারণ করা।

অন্যদিকে, অ্যাক্সিওস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাড়াতে রাজি না হওয়ায় ইসরায়েল কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়েই মূলত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে নেতানিয়াহু বেশ কয়েকটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে গাজায় প্রবেশ করা মানবিক সহায়তা সীমিত করা থেকে শুরু করে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরুর বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় কায়রোয় যে আলোচনা চলছে, তাতে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সূত্রগুলো। হামাস পরিষ্কার জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি চুক্তির শর্ত মেনে চলে, তবে তারা দ্বিতীয় ধাপে যেতে প্রস্তুত। তবে এ ব্যাপারে মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের নিশ্চয়তা প্রয়োজন।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নেতানিয়াহু প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, কৌশলগত বিষয়ক ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যেখানে ইসরায়েল নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু করবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, নেতানিয়াহু হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে স্বল্পমেয়াদী সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে আপাতত তিনি বন্দি বিনিময় চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে যেতে আগ্রহী নন।

গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন নেতানিয়াহুকে বন্দি বিনিময় চুক্তি বাতিল করতে না দেওয়া হয়।

এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘গাজায় আটক ৫৯ বন্দিকে একসঙ্গে ফেরত আনতে হবে। নেতানিয়াহু রাজনৈতিক স্বার্থে চুক্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন, যা আমরা মেনে নেব না।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু হলে তা হবে ‘ভয়াবহ’। তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করতে এবং সকল বন্দিকে মুক্ত করতে সব পক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

এছাড়া, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ফোনালাপে গাজায় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। হামাস জানিয়েছে, তারা পুরোপুরি চুক্তি বাস্তবায়নে প্রস্তুত। তবে, ইসরায়েল যদি শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের হস্তক্ষেপ করা উচিত।

প্রথম ধাপের মেয়াদ শনিবার শেষ হচ্ছে, তবে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো হয়নি।

এদিকে, জানুয়ারির শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে মিশর বা জর্ডানে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা বললেও মিশর ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

পরিস্থিতি কোন পথে এগোবে, তা নির্ভর করছে আসন্ন আলোচনা ও নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের ওপর। তবে গাজার জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কারণ যুদ্ধবিরতি শেষ হলে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা