গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে মিশরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত আলোচনা প্রত্যাশিত ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি। ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১৩-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আলোচনা থেকে ফিরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ পুনরায় শুরুর বিষয়ে আলোচনা করবেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কায়রো থেকে ফিরে আসে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে তারা যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানো এবং হামাসের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তির সম্প্রসারণের চেষ্টা করে। তবে আলোচনা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাস গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চায়। অন্যদিকে, ইসরায়েল এই শর্ত মানতে নারাজ।
তেল আবিবের কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি থাকলেও তারা সেনা প্রত্যাহার বা যুদ্ধ সম্পূর্ণ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি নয়। মধ্যস্থতাকারীরা সমাধানের জন্য আরও সময় চেয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
একজন নিরাপত্তা সূত্র চ্যানেল ১৩-কে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সামরিক বিকল্প নিয়ে আলোচনা করবেন।
গত ১৯ জানুয়ারি কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হয় এবং শনিবার শেষ হবে। তবে দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ইসরায়েল প্রথম ধাপের মেয়াদ আরও বাড়াতে চায়, যাতে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করা যায়। তবে তারা যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘আমরা চুক্তির প্রতিটি ধাপ ও শর্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, যাতে ইসরায়েলকে দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশে বাধ্য করা হয় এবং তারা কোনো বিলম্ব বা কৌশলগত টালবাহানা করতে না পারে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে মিশরের দুটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কায়রো আলোচনায় ইসরায়েল প্রথম ধাপের মেয়াদ আরও ৪২ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু হামাস এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার ওপর জোর দেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পথ সুগম হওয়ার কথা।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই চুক্তি রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তি রক্ষা করা জরুরি, এবং একে ভেঙে পড়তে দেওয়া উচিত নয়।’
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ১৫ মাস ধরে চলেছে, যা এই যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। চলমান যুদ্ধের ফলে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও আহত হয়েছে।
এছাড়া, অঞ্চলটিতে যে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা ও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম
