মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

চুক্তির প্রথম ধাপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে বন্দিবিনিময়ের পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব নয়: হামাস

চুক্তির প্রথম ধাপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে বন্দিবিনিময়ের পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব নয়: হামাস
চুক্তির প্রথম ধাপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে বন্দিবিনিময়ের পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব নয়: হামাস। ছবি : আল জাজিরা

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় ইস্যুতে নতুন আলোচনা শুরুর আগে ইসরায়েলের কাছে চুক্তির প্রথম ধাপের শর্ত বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছে হামাস। সংগঠনটি জানিয়েছে, ইসরায়েল প্রথম ধাপের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলে তারা পরবর্তী ধাপে এগোবে না। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সূত্র জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা জানিয়ে দিয়েছে গত শনিবার থেকে স্থগিত থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে।

হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানৌ অভিযোগ করে বলেন, ‘ইসরায়েল মানবিক শর্ত বাস্তবায়ন করছে না এবং বন্দিবিনিময়ের সপ্তম ধাপ স্থগিত রেখে চুক্তি ব্যাহত করতে চাচ্ছে। তারা চুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আগ্রহী নয়।’

এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, চুক্তির প্রথম ধাপ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলে বন্দিবিনিময়ের পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে বলেছে, তিনি গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের জীবনের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

হামাস আরও জানায়, চুক্তি বাস্তবায়নে ইসরায়েলের অনীহা ও সময়ক্ষেপণের বিষয়ে তারা মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সংগঠনটির মতে, আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে হওয়ায় ইসরায়েলের উচিত চুক্তির প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েদিয়ো আহরোনো এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি বিলম্বের কারণ হিসেবে ‘জাতীয় মর্যাদার বিষয়’ উল্লেখ করা হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ‘বন্দি শেরি বিবাসের পরিবারের সদস্যদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হবে, তবে এখন মূল লক্ষ্য জিম্মিদের মরদেহ ফিরিয়ে আনা।’

ইসরায়েলি সূত্রের দাবি, হামাস যদি নিরস্ত্র হয়, গাজাকে অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং হামাস ও ইসলামিক জিহাদের নেতাদের বহিষ্কার করা হয়, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হতে পারে। অন্যথায় তারা সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে।

ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরুর জন্য চারটি শর্ত রয়েছে—

১. সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে।
২. হামাসকে গাজা থেকে সরাতে হবে।
৩. গাজাকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র করতে হবে।
৪. ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেছেন, ‘এই চুক্তি সন্ত্রাসকে উসকে দিচ্ছে। এতে গাজা থেকে রকেট ও বোমা হামলা বাড়তে পারে।’

গত ১৯ জানুয়ারি কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির তিনটি ধাপ রয়েছে, প্রতিটি ৪২ দিনব্যাপী। তবে হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল প্রথম ধাপের শর্ত মানেনি।

হামাসের দাবি, ইসরায়েল শরণার্থীদের উত্তর গাজায় ফেরার অনুমতি দেয়নি, বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে, মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়েছে এবং বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করছে।

সংগঠনটি আরও জানায়, গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হলেও ইসরায়েল সপ্তম দফার ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেয়নি।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না ‘অপমানজনক আচরণ’ বন্ধ হয়। হামাস বলছে, ইসরায়েল ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর কথা থাকলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি চলতি সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যে আসছেন, যাতে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানো যায়।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রথম ধাপ দীর্ঘায়িত হোক। আমি সম্ভবত বুধবার মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছি, যাতে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া যায় এবং আরও বন্দিদের মুক্ত করা যায়।’

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ হওয়ার পথে, তবে হামাসের অভিযোগ, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল একাধিকবার তা লঙ্ঘন করেছে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা