সুদানে রুশ নৌঘাঁটি স্থাপনের বিষয়টি আবারো আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে চুক্তিটি অনিশ্চিত থাকলেও সম্প্রতি সুদানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইউসুফ মস্কো সফরে গিয়ে এ নিয়ে নতুন সমঝোতার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাস্তবায়নের চেয়ে আন্তর্জাতিক মহলে রাজনৈতিক বার্তা পাঠানোর কৌশলও হতে পারে।
মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আলী ইউসুফ জানান, চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো বাধা নেই এবং উভয় দেশ এ বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
২০২০ সালে সুদান ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ২০২১ সালে সুদানে সামরিক অভ্যুত্থান এবং ২০২৩ সালের গৃহযুদ্ধের ফলে চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তবে এখন নতুন করে আলোচনায় আসায় প্রশ্ন উঠছে, এটি কি বাস্তবায়নের পথে, নাকি শুধুই কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ?
প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, লোহিত সাগরের তীরে রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করা হবে, যেখানে চারটি যুদ্ধজাহাজ নোঙর করতে পারবে। এই ঘাঁটি পারমাণবিক শক্তিচালিত যুদ্ধজাহাজ গ্রহণ এবং ৩০০ সামরিক ও বেসামরিক কর্মী নিয়োগের সক্ষমতা রাখবে। মূলত এটি রুশ নৌবাহিনীর রসদ সরবরাহ ও মেরামতের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
রাশিয়ার লোহিত সাগরে সামরিক উপস্থিতি পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে, সুদান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকায় এই ঘাঁটি আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সুদানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সুদানের কমিউনিস্ট পার্টি চুক্তিটিকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করবে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করবে। বিরোধী নেতা ইয়াসির আরমানের মতে, ‘সুদানের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তি ও স্থিতিশীলতা, কোনো বিদেশি ঘাঁটি নয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আমির বাবাকরের মতে, সুদানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্য মূলত আন্তর্জাতিক মহলে একটি বার্তা পাঠানোর কৌশল। বাস্তবিক অর্থে, দেশের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ ও অস্থিরতার কারণে এই ঘাঁটি এখনই অগ্রাধিকার নয়।
অন্যদিকে, বিশ্লেষক মোহাম্মদ সাঈদের মতে, সুদানি সরকার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করতেই এই ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যাতে সুদান দেখতে পারে অন্যান্য দেশ কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির রাশিয়াকে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা তখন গৃহীত হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে সুদান ও রাশিয়া তাদের নৌবাহিনীর জন্য সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের চুক্তি করেছিল। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও সুদানি সেনাপ্রধান জানিয়েছিলেন যে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন সমঝোতার পরও সুদান-রাশিয়ার এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে কি না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে স্থিতিশীলতা আসার আগ পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হবে। অন্যদিকে, লোহিত সাগর অঞ্চলের অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়াও এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: আনাদোলু এজেন্সি