মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

আফগানিস্তান-ইরান সম্পর্কের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব

আফগানিস্তান-ইরান সম্পর্কের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব
আফগানিস্তান-ইরান সম্পর্কের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রভাব। ছবি : হুররিয়াত রেডিও

আফগানিস্তান ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। বিশেষ করে বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশ একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে, যা শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

তালেবান শাসনামলে ইরান আফগানিস্তানের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ, নির্মাণ সামগ্রী এবং শিল্পজাত পণ্যের আমদানি বেড়েছে। একই সঙ্গে আফগান পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

বিশেষ করে ইরানের বন্দর ব্যবহার করে বৈশ্বিক বাজারে পণ্য পৌঁছানোর ফলে আফগান পণ্যের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আফগান খনিজ চীনে রপ্তানি করা হয়েছে, যা আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

আফগানিস্তানের ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থান এটিকে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সেতুতে পরিণত করেছে। এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে তালেবান সরকার চাবাহার এবং বন্দর আব্বাসে পণ্য পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

চাবাহার বন্দর আফগানিস্তানের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ইরান, ভারত ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে। পাকিস্তানের বাণিজ্যিক বাধা অতিক্রম করে এই বন্দর ব্যবহার করে আফগান পণ্য এখন ভারত, চীন এবং রাশিয়ার বাজারে পৌঁছাতে পারছে। এর ফলে আফগান রপ্তানি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

তালেবান শাসনামলে ‘খাওয়াফ-হেরাত’ রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়েছে। এই রেললাইন ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও মজবুত করছে। একই সঙ্গে এটি আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবহন খাতে আয় বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করছে।

তালেবান সরকারের শাসনামলে দুই দেশের মধ্যে কাস্টমস ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোর মাধ্যমে বাণিজ্যিক লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, কূটনৈতিক সম্পর্কও নতুন মাত্রা পেয়েছে। দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত সফর ও রাজনৈতিক প্রতিনিধি বিনিময় দ্বিপাক্ষিক আস্থা ও সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।

তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতি অব্যাহত থাকলে আফগানিস্তান আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে। অন্যদিকে, ইরানও সহজেই মধ্য এশিয়ার বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাবে।

এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে পরিণত করতে তালেবান সরকারের জন্য প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ ও সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রেখে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত করবে।

আফগানিস্তান-ইরান সম্পর্কের এই অগ্রগতি কেবল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সাফল্য নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন সম্ভাবনার দিক নির্দেশনা করছে।

সর্বশেষ