মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাড়ছে মুসলিমবিরোধী ঘৃণাবাচক বক্তব্য

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাড়ছে মুসলিমবিরোধী ঘৃণাবাচক বক্তব্য
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বাড়ছে মুসলিমবিরোধী ঘৃণাবাচক বক্তব্য। ছবি : টিআরটি অ্যারাবিক

ভারতে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ঘটনার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ৭৫% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মূলত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতেই বেশি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রসার ও ক্ষমতাসীন বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল এই বিদ্বেষ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

‘ইন্ডিয়া হেট ল্যাব’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যেখানে ৬৬৮টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য নথিভুক্ত হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৬৫-তে, যা ৭৪.৪% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। শুধু সংখ্যা নয়, বরং এ ধরনের বক্তব্য আরও উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিশেষত, মুসলিমদের ‘বিদেশি’, ‘অনুপ্রবেশকারী’ ও ‘হিন্দুদের শত্রু’ হিসেবে চিত্রিত করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি নির্বাচনী প্রচারণায় মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে। মোদি একাধিকবার মুসলিমদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বিরোধী দল কংগ্রেসকে মুসলিমদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনের আগে বিজেপির শীর্ষ নেতারা ৪৫০টিরও বেশি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যার মধ্যে মোদি একাই ৬৩টি বক্তব্য দিয়েছেন।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষত, নির্বাচনী প্রচারের সময় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের দেওয়া ২৬৬টি বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দল ও নেতাদের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে একযোগে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলিমদের ‘হিন্দু ও ভারতীয় জাতির অস্তিত্বের জন্য হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এমনকি ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের আহ্বান জানিয়ে দেওয়া বক্তব্যের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালে যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ঘটনা ঘটেছে, তার ৮০%–এর বেশি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে নথিভুক্ত হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো মুসলিমদের ধর্মীয় স্থাপনার দখল নেওয়ার দাবি তুলেছে এবং সংখ্যালঘুদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিত্রিত করে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। এমনকি নয়াদিল্লির মতো শহরগুলোতে নিরাপত্তার খোঁজে অনেক মুসলিম মুসলিম-প্রধান এলাকায় সরে যাচ্ছেন, যেখানে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক সুযোগ তুলনামূলক কম।

ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষ আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও উসকানিমূলক প্রচারণা বন্ধ করা না গেলে দেশটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ঘটনার ঊর্ধ্বগতি দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। বিশেষত, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে বিদ্বেষের মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে, যা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভারতের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা