মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা অবাস্তব: মার্কিন বিশেষজ্ঞরা

ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা অবাস্তব: মার্কিন বিশেষজ্ঞরা
ট্রাম্পের গাজা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা অবাস্তব: মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। ছবি : আল জাজিরা

গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই একে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের জটিলতা সম্পর্কে তার অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি কঠোর হলেও কার্যকর সমাধানের চেষ্টা। তবে বিশ্লেষকদের বড় একটি অংশ এই পরিকল্পনাকে অবাস্তব ও বাস্তবায়ন-অযোগ্য বলে মনে করছেন।

সম্প্রতি ট্রাম্প জর্ডান ও মিশরকে গাজার অধিবাসীদের গ্রহণ করতে বলার পাশাপাশি গাজা উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এতে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে এবং দক্ষতার সঙ্গে এটি পরিচালনা করবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে এত সহজে কোনো সমাধান কার্যকর করা সম্ভব নয়। অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক জনাথান বানিকভ মনে করেন, ট্রাম্প হয়তো পুরোপুরি বুঝতে পারেননি বা বোঝার প্রয়োজন মনে করেননি—এই অঞ্চলের ইতিহাস, ফিলিস্তিনিদের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক এবং মাতৃভূমির প্রতি তাদের আবেগ।

মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক ড্যানিয়েল ওয়ারিক বলেন, ‘ট্রাম্প সম্পত্তি কেনাবেচার বিষয়ে অভ্যস্ত হলেও তিনি বোঝেন না যে গাজার জনগণ তাদের ভূমির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। ১৯৪৮ সালে বাস্তুচ্যুত হওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের এখনও তাড়া করে বেড়ায়। ফলে তারা গাজা ছেড়ে যেতে রাজি হবে না।’

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের সন্ত্রাসবিরোধী প্রকল্পের সাবেক প্রধান অ্যালেক্স ব্লিটসাস মনে করেন, গাজাকে দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা বিপুল ব্যয় ও নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে। তিনি বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠনে ১৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিন্তু এর ব্যয় বহন করবে কে? যুক্তরাষ্ট্র কি পুরো খরচ দেবে, নাকি আন্তর্জাতিক কোনো সহযোগী এগিয়ে আসবে?’

কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে যুদ্ধাপরাধ, জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও গণহত্যার শামিল বলে অভিহিত করেছেন। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে স্টিভেন কুক লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় ট্রাম্পের কথাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হয়, যদিও তার কিছু প্রস্তাব একেবারেই ভিত্তিহীন। গাজার জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তাবও তেমনই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে নতুন চিন্তার প্রয়োজন। গাজার সমস্যাটি অত্যন্ত জটিল, কিন্তু ট্রাম্পের প্রস্তাব কেবল অনৈতিকই নয়, এটি বিপজ্জনকও।’

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। স্টিভেন কুক বলেন, ‘গাজা থেকে ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করলে সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। একই সঙ্গে, মিশর ও জর্ডানের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তি চুক্তিও হুমকির মুখে পড়বে, যা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির অন্যতম ভিত্তি ছিল।’

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের গবেষক নাথান স্যাকস বলেন, ‘গাজার ২০ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা আইনসম্মত নয় এবং এটি চরম অমানবিক হবে। ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিরা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই করে আসছে। ফলে তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।’

মার্কিন গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি’র (CNAS) গবেষক র‍্যাচেল জিম্বা মনে করেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ট্রাম্প কেবল সম্প্রসারণবাদী চিন্তার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। তিনি কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা নিয়েও এমন মন্তব্য করেছেন। কিন্তু এখানে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি শান্তির কথা বললেও আসলে ২০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছেন, যা একেবারেই অবাস্তব।’

বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, ফিলিস্তিনিরা কি স্বেচ্ছায় গাজা ছাড়তে রাজি হবে, নাকি তাদের জোর করে সরানো হবে? তাদের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অস্পষ্ট। কেউ কেউ এটিকে তার ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ হিসেবেও দেখছেন।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা