গাজা উপত্যকার কাছাকাছি অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে রিজার্ভ বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড এলাকায় সম্ভাব্য বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজার ভেতরে ও আশপাশে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ‘পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড এলাকায় সতর্কতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পর অতিরিক্ত ও ব্যাপক হারে সেনা শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তারা জানায়, সম্ভাব্য বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল এবং গাজা উপত্যকার সীমান্তবর্তী বসতিগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানান, ‘হামাস তাদের ঘোষণার মাধ্যমে চুক্তি ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমাদের বন্দিদের মুক্তি দেয়নি। এ কারণে আমি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজা ও আশপাশে সৈন্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি।’
নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি হামাস শনিবার দুপুরের মধ্যে আমাদের বন্দিদের মুক্তি না দেয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি শেষ করা হবে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পূর্ণ শক্তি নিয়ে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করবে, যতক্ষণ না হামাসকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করা যায়।’
যদিও নেতানিয়াহু নির্দিষ্ট করে বলেননি কতজন বন্দির মুক্তি চান, তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর রেডিও জানিয়েছে, শনিবার যদি হামাস তিনজন বন্দিকে মুক্তি দেয়, তাহলে চুক্তির প্রথম ধাপ অব্যাহত থাকবে।
হামাস সোমবার জানায়, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে বাকি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার রাতে ইসরায়েলি পত্রিকা ‘ইয়েদিয়থ আহরোনোথ’ জানায়, গাজা ফ্রন্টের সৈন্যদের ছুটি বাতিল করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গেলে পুনরায় সংঘর্ষ শুরুর জন্য বাহিনীকে সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার ভেতর থেকে বেশিরভাগ সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ রবিবার মধ্য গাজার নেতজারিম করিডর থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়। তবে বর্তমানে গাজা ডিভিশন ও ডিভিশন ১৬২ সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন রয়েছে।
যদিও যুদ্ধবিরতি চলছে, তবু ইসরায়েলি ড্রোন থেকে গাজার বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই গুলি চালানো হচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত ৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৮২২ জন আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি তিনটি ধাপে বিভক্ত, প্রতিটি ধাপ ৪২ দিন স্থায়ী হবে। প্রথম ধাপে বন্দিমুক্তি এবং পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য আলোচনার কথা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় কাতার ও মিশর মধ্যস্থতা করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা