গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির দাবিতে তেলআবিবে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে শহরের কেন্দ্রস্থলে শত শত মানুষ সমবেত হয়ে বন্দিবিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানান। তারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেড অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়া স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এর প্রতিবাদেই তেলআবিব জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিক্ষোভকারীরা তেলআবিবের বেগিন সড়ক অবরোধ করেন, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ‘কিরইয়া’র সামনে অবস্থিত। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়ালা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালিয়ে ও মশাল প্রজ্বলন করে প্রতিবাদ জানান। এতে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকে প্ল্যাকার্ড বহন করেন, যেখানে লেখা ছিল—‘তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনো’ ও ‘যুদ্ধ বন্ধ করো’। এছাড়া ‘ইসরায়েলি সরকার চুক্তি ভেস্তে দিয়েছে’ ও ‘নেতানিয়াহু চুক্তি নষ্ট করেছেন’ বলে স্লোগান দেন তারা।
এই বিক্ষোভ মূলত গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দি আলন ওহেলের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের আয়োজিত এক সমাবেশ ছিল। তবে কাসসাম ব্রিগেডের ঘোষণার পর আরও বহু মানুষ এতে যোগ দেন।
গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি কার্যকর হয়। চুক্তিটি তিন ধাপে সম্পন্ন হওয়ার কথা, প্রতিটি ধাপ ৪২ দিনব্যাপী। প্রথম ধাপ শেষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা হবে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায়।
যদিও যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবু ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিত ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হচ্ছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
গাজায় চলমান মানবিক সংকটের কারণে সেখানকার প্রশাসন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে বারবার হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির মানবিক শর্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করা যায়। তবে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
হামাস দাবি করেছে, তারা চুক্তির সব শর্ত যথাযথভাবে ও নির্ধারিত সময়েই পালন করেছে, কিন্তু ইসরায়েল চারটি ক্ষেত্রে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফলে কাসসাম ব্রিগেড ঘোষণা দিয়েছে, চুক্তির আওতায় নির্ধারিত আগামী শনিবারের ষষ্ঠ দফায় বন্দি মুক্তি আপাতত স্থগিত থাকবে, যতক্ষণ না ইসরায়েল সব শর্ত পূরণ করে।
সূত্র: টিআরটি অ্যারাবিক