মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

তুরস্ক সকল বিষয়ে সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে একমত পোষণ করবে: এরদোগান

তুরস্ক সকল বিষয়ে সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে একমত পোষণ করবে: এরদোগান
তুরস্ক সকল বিষয়ে সিরিয়ার প্রশাসনের সঙ্গে একমত পোষণ করবে: এরদোগান। ছবি : আনাদোলু এজেন্সি

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান জানিয়েছেন, আঙ্কারা ও দামেস্কের মধ্যে সব বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে । মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আঙ্কারার প্রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্সে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আশ-শারার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

এ সময় শারার সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে এরদোগান বলেন, এই সফর দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করেছে।

নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যমত

এরদোগান জানান, সিরিয়ায় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য যৌথ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একসঙ্গে কাজের মাধ্যমে আমাদের অভিন্ন ভূখণ্ডকে সন্ত্রাসমুক্ত করে শান্তি ও সমৃদ্ধির পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

সিরিয়ার জনগণের দুর্ভোগের কথা উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, গত ১৩.৫ বছরে সিরিয়ার মানুষ নানা ধরনের নিপীড়ন, গণহত্যা এবং রাসায়নিক অস্ত্রের হামলার শিকার হয়েছে। প্রায় এক মিলিয়ন সিরীয় প্রাণ হারিয়েছে, লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সব প্রতিকূলতার মধ্যেও সিরিয়ার সাহসী জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছে। ৮ ডিসেম্বরের বিজয় প্রমাণ করেছে—সিরিয়া শেষ পর্যন্ত তার জনগণের জন্যই। এ সময় তিনি স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেওয়া শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

তুরস্ক-সিরিয়ার সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করার বিষয়েও কথা বলেন এরদোগান। তিনি বলেন, গত দুই মাস ধরে আমরা সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে কাজ করছি। এ লক্ষ্যে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানির সঙ্গেও বৈঠক করেছি। ভবিষ্যতে আরও উচ্চপর্যায়ের সফর ও আলোচনা হবে।

এরদোগান জানান, আমাদের লক্ষ্য হলো সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা। শারার সঙ্গে বৈঠকও এই নীতির ভিত্তিতেই হয়েছে।

সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ

সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যৌথ পদক্ষেপের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এরদোগান বলেন, আইএস বা পিকেকে—যে ধরনের সন্ত্রাসই হোক না কেন, সিরিয়াকে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত তুরস্ক।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস দমনে শারার দৃঢ় অবস্থান আমাদের আশাবাদী করেছে। আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হলো দুই দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সিরিয়ার পুনর্গঠনে তুরস্কের প্রতিশ্রুতি

সিরিয়ার রাজনৈতিক অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন এরদোগান। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশাসন গঠনের জন্য কাজ করছি, যা সব সিরীয় নাগরিকের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাবে।

তিনি সিরিয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো ও শহরগুলো পুনর্গঠনে তুরস্কের সহায়তার আশ্বাস দেন। এরদোগান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুতই সিরিয়ায় স্বেচ্ছামূলকভাবে শরণার্থীদের ফিরে আসার পথ সুগম করবে।

অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের উদ্যোগ

এরদোগান জানান, সিরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবরোধ দেশটির পুনর্গঠনে বড় বাধা। তবে আমাদের প্রচেষ্টায় কিছু নিষেধাজ্ঞা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বাকি অবরোধও তুলে নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, সিরিয়ার নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর তুরস্ক দামেস্কে দূতাবাস ও আলেপ্পোতে কনস্যুলেট চালু করেছে। পাশাপাশি তুর্কিশ এয়ারলাইন্স দামেস্কে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন

এরদোগান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সফর বিনিময় হয়েছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে। তিনি জানান, বাণিজ্য, জ্বালানি, বিমান চলাচল, স্বাস্থ্য, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে এরদোগান বলেন, যদি আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন, তবে আমরা গর্বের সঙ্গে দেখব, কীভাবে সিরিয়ার জনগণ তাদের দেশকে পুনর্গঠন করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

তিনি আরব ও মুসলিম বিশ্বকে সিরিয়ার নতুন প্রশাসন ও জনগণের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা