মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের আচরণে রেড ক্রসের ক্ষোভ

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের আচরণে রেড ক্রসের ক্ষোভ
ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের আচরণে রেড ক্রসের ক্ষোভ। ছবি : আনাদোলু

ইসরায়েলের কৎসিয়ুত (নেগেভ মরুভূমি) কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলেছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (ICRC)। বন্দিদের হাতকড়া পরিয়ে, মাথার ওপর তুলে কষ্টদায়ক ভঙ্গিতে হাঁটিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সংস্থাটি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

শনিবার ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ এক প্রতিবেদনে জানায়, বন্দিমুক্তির সময় ইসরায়েলের কারা প্রশাসনের আচরণে ক্ষোভ জানিয়েছে রেড ক্রস। পত্রিকাটি এক নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, ‘রেড ক্রস ইসরায়েলের কারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বন্দিদের যেভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তা তাদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।’

রেড ক্রসের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বন্দিদের পিছনে হাতকড়া পরানো অবস্থায় তাদের হাত জোর করে মাথার উপর তুলে হাঁটানো হয়, যা অমানবিক ও যন্ত্রণাদায়ক। এ ছাড়া বন্দিদের হাতে একটি ব্রেসলেট পরানো হয়, যেখানে লেখা ছিল: ‘চিরন্তন জাতি ভুলে না,’ যা বন্দিদের জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির ইঙ্গিত দেয়।

হারেৎজ পত্রিকা এমন একটি ব্রেসলেটের ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে আরবি ভাষায় লেখা ছিল ‘চিরন্তন জাতি ভুলে না, আমি আমার শত্রুদের ধাওয়া করি এবং ধরতে সক্ষম হই,’ যা ইঙ্গিত দেয়, ইসরায়েল মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের ভবিষ্যতে আবারও আটক বা হত্যা করতে পারে।

রেড ক্রসের অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের কারা প্রশাসনের মুখপাত্র জিভোন ফ্রিডম্যান বলেন, ‘কারা প্রহরীরা ইসরায়েলের সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রুদের সাথে কাজ করে।’ তিনি মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের ‘বিপজ্জনক সন্ত্রাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ইসরায়েলি ভূখণ্ডে যতক্ষণ তারা থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কারা প্রশাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। আমাদের জাতির নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস করা হবে না।’

এদিকে, ইদিয়োথ আহরোনোথ পত্রিকা জানায়, শনিবার ইসরায়েল ১৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪২ জনকে কৎসিয়ুত কারাগার থেকে গাজা উপত্যকায় পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে ওফার কারাগার থেকে পশ্চিম তীরে।

এই বন্দিমুক্তি পাল্টা হিসেবে হামাস একই দিন সকালে তিনজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেয়। এটি যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রথম পর্যায়ের চতুর্থ দফার অংশ।

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত, প্রতিটি পর্যায় ৪২ দিন করে চলবে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনার সাফল্যের ভিত্তিতে পরবর্তী দুটি পর্যায় শুরু হবে, যেখানে মিসর ও কাতার মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ১৯ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন গাজা থেকে চারটি দফায় মোট ১৩ জন ইসরায়েলি ও ৫ জন থাই নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে।

বর্তমানে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের হাতে আরও ২০ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে, যাদেরও শিগগির মুক্তি দেওয়া হবে। প্রথম পর্যায়ের শেষে মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।

এর বিপরীতে, ইসরায়েল এখন পর্যন্ত চারটি দফায় মোট ৫৮৩ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যা প্রথম পর্যায়ের চুক্তির আওতায় সম্পন্ন হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা