মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

দীর্ঘ ২৫ বছর পর মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবী কুতাইবা মুসলিম

দীর্ঘ ২৫ বছর পর মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবী কুতাইবা মুসলিম
দীর্ঘ ২৫ বছর পর মুক্তি পেলেন ফিলিস্তিনি বুদ্ধিজীবী কুতাইবা মুসলিম। ছবি : আনাদোলু

ইসরায়েলের কারাগারে দীর্ঘ ২৫ বছর কাটানোর পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনি বন্দি কুতাইবা মুসলিম। হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের বন্দিবিনিময় চুক্তির তৃতীয় দফার আওতায় বৃহস্পতিবার তিনি মুক্তি পান। কারাগার থেকে বেরিয়েই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে কুতাইবা বলেন, ‘ইসরায়েলের কারাগারগুলো এক কথায় নরকের মতো।’

দীর্ঘ বন্দিজীবন ও সাহিত্যচর্চা

২০০০ সালে গ্রেপ্তার হওয়া কুতাইবা মুসলিমকে ৩৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কারাবন্দি জীবনেই তিনি নিজেকে তুলে ধরেন একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে। কঠিন সময়েও থেমে থাকেননি লেখালেখি; রচনা করেছেন বেশ কয়েকটি বই ও উপন্যাস। তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘স্বর্ণাক্ষর’ (حروف من ذهب), ‘কারাগারে শেষ চুম্বন’ (آخر قبلة في السجن) এবং ‘একাধিক প্রেমিকার সঙ্গে একটি সেল’ (زنزانة وأكثر من حبيبة)।

কারাগারে কাটানো দিনগুলোর কথা স্মরণ করে কুতাইবা বলেন, ‘সেখানে প্রতিটি মুহূর্ত বন্দিদের জন্য একপ্রকার মৃত্যুর মতো। জীবন্ত থেকেও যেন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।’

ফিলিস্তিনের প্রতি অবিচল আনুগত্য

নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে কুতাইবা মুসলিম বলেন, ‘আমি ফাতাহ আন্দোলনের সদস্য, এটা সত্যি। তবে তার চেয়েও বড় পরিচয় হলো—আমি পুরো ফিলিস্তিনের সন্তান, হোক সেটা পশ্চিম তীরের বা গাজার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফাতাহ আন্দোলনের অস্ত্র কখনো ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি। এটি সবসময় সংগ্রামের সামনের সারিতে ছিল, থাকবে এবং কোনোদিন পরাজিত হবে না।’

মুক্তির আগের দুঃসহ দিনগুলো

মুক্তির আগে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ বন্দিদের মানসিকভাবে ভেঙে দিতে নানান কৌশল অবলম্বন করেছিল বলে অভিযোগ করেন কুতাইবা। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল আমাদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানসিক যন্ত্রণায় রাখার চেষ্টা করেছে। আমাদের সবাইকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়েছিল, যেন আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার আগেই হার মানি।’

তিনি আরও জানান, ‘একসময় আমাদের বলা হয়েছিল বন্দিবিনিময় চুক্তি স্থগিত করা হয়েছে। সেই খবরটা আমাদের জন্য ছিল অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। আমরা তখন মুক্তির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই সময়টা ছিল ভয়াবহ, মানসিক দিক থেকে সবচেয়ে কঠিন।’

পরিবারের সঙ্গে আবেগঘন পুনর্মিলন

দীর্ঘ ২৫ বছরের বন্দিজীবনের অবসান ঘটিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর কুতাইবার জীবনের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত ছিল তার চাচাতো ভাই কাসেম মুসলিমের সঙ্গে পুনর্মিলন, যিনি তার সঙ্গেই ২১ বছর কারাবন্দি ছিলেন।

কুতাইবা বলেন, ‘আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে ২১ বছর এক কারাগারে কাটিয়েছি। তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গী, আমার যন্ত্রণার সাথি, লড়াইয়ের প্রেরণা।’

কারাগারের ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে এখন তিনি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। তবে ইসরায়েলি কারাগারে কাটানো অভিজ্ঞতা তার মনে গভীর দাগ কেটে গেছে, যা কোনোদিন মুছে যাবে না বলে জানান কুতাইবা মুসলিম।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা