ইসরায়েলের কারাগারে দীর্ঘ ৩৩ বছর বন্দি থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ ফালানা (৬০)। বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) হামাস ও ইসলামিক জিহাদের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এই চুক্তির আওতায় হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গাজা উপত্যকা থেকে তিনজন ইসরায়েলি এবং পাঁচজন থাই নাগরিককে মুক্তি দিলে, বিনিময়ে ইসরায়েল ১১০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
গ্রেপ্তার ও অভিযোগ
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের রামাল্লার পশ্চিমাঞ্চলীয় সাফা শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফালানাকে ১৯৯২ সালের ২৯ নভেম্বর ইসরায়েলি বাহিনী গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি পশ্চিম তীরের ‘মতিতিয়াহু’ নামে একটি অবৈধ ইসরায়েলি বসতির কাছে একটি যাত্রীবাহী বাসে বোমা হামলায় জড়িত ছিলেন। ওই ঘটনায় বসতির প্রশাসনিক প্রধান নিহত হন এবং আরও ৯ জন আহত হন।
এর আগেও তিনি ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তাকে প্রথমবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং ইসরায়েলি সামরিক যান লক্ষ্য করে মলোটভ ককটেল (দাহ্য বোতল) নিক্ষেপের অভিযোগে ১৪ মাস কারাবাসে থাকতে হয়।
কারাবাস ও নির্যাতন
গ্রেপ্তারের পর ফালানাকে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি করা হয়। স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় এবং এক বছর একাকী বন্দি রাখা হয়। পরে ইসরায়েলি আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
কারাবাসের সময় তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ২০১০ সালে তার বাবা মারা যান, কিন্তু মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে শেষবার তিনি বাবাকে দেখেছিলেন। তার বোন ইয়াসরা ২০০৯ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তবে ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার কারণে ১৫ বছর ধরে তিনি বোনের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
পরিবার ও কারাগারে জীবন
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, ফালানা ছিলেন অত্যন্ত প্রাণবন্ত, সামাজিক ও পরিবারপ্রেমী মানুষ। বন্দিদশায় থেকেও তিনি পরিবারের প্রতি সংযোগ রেখেছিলেন এবং বিভিন্ন উপলক্ষে তাদের জন্য উপহার পাঠানোর অনুরোধ করতেন।
ফালানা সেইসব ফিলিস্তিনি বন্দিদের একজন, যারা ১৯৯৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রথম ‘অসলো চুক্তি’র আগেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ইসরায়েল গত তিন দশকে বেশ কয়েকবার বন্দি বিনিময়ের সুযোগ এলেও তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল।
তবে অবশেষে ৩৩ বছর পর বন্দিদশার অবসান ঘটিয়ে তিনি আবার মুক্ত জীবনে ফিরলেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি
