ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দাইফ শহিদ হয়েছেন। কাসসাম ব্রিগেডের সামরিক মুখপাত্র আবু উবায়দা বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, চলমান ‘তুফানুল-আকসা’ যুদ্ধে কাসসাম ব্রিগেডের আরও কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার শাহাদাত বরণ করেছেন।
আবু উবায়দা বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় সব প্রস্তুতি ও যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করার পর আমরা এ ঘোষণা দিচ্ছি। কাসসাম ব্রিগেড আজ আমাদের জনগণ, জাতি ও বিশ্বের সমস্ত স্বাধীনতাকামীদের উদ্দেশে একদল শীর্ষ মুজাহিদ ও বীর কমান্ডারদের শাহাদাতের সংবাদ জানাচ্ছে।’
তিনি জানান, শহিদ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন—
• কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফ (আবু খালেদ)
• কাসসাম ব্রিগেডের উপ-প্রধান মারওয়ান ঈসা (আবু বারাআ)
• অস্ত্র ও সামরিক পরিষেবা বিভাগের প্রধান গাজী আবু তামা (আবু মূসা)
• মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান রায়েদ সাবিত (আবু মোহাম্মদ)
• খান ইউনুস ব্রিগেডের প্রধান – রাফা সালামা (আবু মোহাম্মদ)
এর পাশাপাশি আগেই শহিদ হওয়া আরও দুই কমান্ডারের নাম পুনরায় উল্লেখ করা হয়—
• উত্তর ব্রিগেডের প্রধান আহমদ গানদুর (আবু আনাস)
• মধ্য ব্রিগেডের প্রধান – আইমান নুফল (আবু আহমদ)
আবু উবায়দা বলেন, ‘এই বীর কমান্ডাররা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে থেকে শাহাদাত বরণ করেছেন। কেউ যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন কমান্ড সেন্টার থেকে, কেউ সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন, আবার কেউ ফ্রন্টলাইনে থেকে যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের শাহাদাত এক গৌরবময় জীবনের সমাপ্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা প্রমাণ করেছেন, তাদের জীবন কোনো নিরীহ ফিলিস্তিনি শিশুর চেয়ে বেশি মূল্যবান নয়। তারা আল্লাহর পথে ও ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন।’
তিন দশকের প্রতিরোধের নেতা মোহাম্মদ দাইফ
মোহাম্মদ দাইফ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বহুবার ইসরায়েল তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে, তবে প্রতিবারই তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেন।
আবু উবায়দা বলেন, ‘দাইফের নাম ইতিহাসে শহীদদের কাতারে লেখা থাকবে। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি শত্রুর আতঙ্ক ছিলেন। তার আত্মত্যাগ প্রতিরোধ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মারওয়ান ঈসা, যিনি কাসসাম ব্রিগেডের ‘কৌশলগত মস্তিষ্ক’ ছিলেন, তিনি কি বিছানায় মারা যাবেন? আবু মূসা, যিনি মুজাহিদদের অভিভাবক ছিলেন, তিনি কি যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে আসবেন? কাসসামের সমস্ত কমান্ডার— আহমদ গানদুর, আইমান নুফল ও রাফা সালামা— কি ফিলিস্তিনের মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের উৎসর্গ করবেন না?’
আবু উবায়দা বলেন, ‘তাদের শাহাদাত আমাদের প্রতিরোধ আন্দোলনকে দুর্বল করবে না, বরং আরও শক্তিশালী করবে। তাদের জীবন ছিল বীরত্বে ভরা। তাদের দেখানো পথেই প্রতিরোধ সংগ্রাম চলবে, যতদিন না পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়।’
শেষে তিনি শহিদদের জন্য দোয়া করেন এবং বলেন, ‘তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। আল্লাহ তাদের পথ দেখাবেন, তাদের অবস্থান উন্নত করবেন এবং তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন।’
সূত্র : আরটি