সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা ‘হুররাস আদ-দিন’ সাংগঠনিক কার্যক্রম বিলুপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ‘সিরিয়ায় আমাদের মিশন শেষ হয়েছে, কারণ বাশার আল-আসাদের পতন ঘটেছে এবং সিরিয়ার বিপ্লব বিজয়ী হয়েছে।’
তবে জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত— যা দেশের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, আল কায়েদা সংগঠন হিসেবে সিরিয়ায় প্রবেশ করেনি, বরং ব্যক্তিগতভাবে কিছু সদস্য ‘আহলুশ শামের’ (সিরিয়ার জনগণ) সহায়তার জন্য সেখানে গিয়েছিল। এমন এক সময়ে আল কায়দা সিরিয়ায় প্রবেশ করে, যখন বাশার আল আসাদ জনগণের উপর গণহত্যা চালাচ্ছিল।
‘হুররাস আদ-দীন’ সিরিয়ায় আল-কায়েদার মূল শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি আগে ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’ এবং তার আগে ‘জাবহাতু ফাতহিশ শাম’-এর অংশ ছিল। এরও আগে এটি ‘জাবহাত আন-নুসরা’ নামে পরিচিত ছিল। হুররাস আদ দীন ‘খোরাসান গ্রুপের’ অংশ হিসেবে আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।
মঙ্গলবার রাতে এক বিবৃতিতে ‘হুররাস আদ-দিন’ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে, সিরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং বিজয়ের ফলে সংগঠন বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, ‘কেন্দ্রীয় কমান্ডের নির্দেশে সিরিয়ায় আল কায়েদার শাখা হিসেবে পরিচিত হুররাস আদ দিন সংগঠনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।’ পাশাপাশি শরিয়াহ অনুযায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে নতুন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ‘অস্ত্র যাতে সিরিয়ার জনগণের হাতেই থাকে।’
জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর বিশ্লেষক, জর্দানিয়ান গবেষক হাসান আবু হানিয়া ‘আল-কুদস আল-আরাবি’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘হুররাস আদ-দিন’ গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি জানান, সংগঠনটি আগে ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’ এবং তার আগে ‘জাবহাত আন-নুসরা’-এর অংশ ছিল। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে এবং আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এতে সংগঠনের ভেতরে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। আল কায়েদার প্রতি অনুগত ‘খোরাসান গ্রুপ’ আলাদা হয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন পর্যন্ত নামহীন অবস্থায় থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুররাস আদ-দিন যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্তও হয় তবে তারা অস্ত্র না ছাড়ার ওপর জোর দেবে। এতে সংগঠনটি প্রকাশ্য সামরিক উপস্থিতির পরিবর্তে গোপনে নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনায় মনোযোগ দেবে।
গবেষক হাসান আবু হানিয়া মনে করেন, আল কায়েদা আফগানিস্তানে যেমন তালেবান শাসনের অধীনে থাকার কৌশল গ্রহণ করেছে, সিরিয়ায় তেমনি ‘হাইয়াত তাহরির আশ-শাম’-এর ছায়াতলে টিকে থাকার চেষ্টা করবে, তবে সতর্ক থাকবে। এর অর্থ, তারা সংগঠনটির সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে তাকে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের সুযোগ দেবে এবং নিজেদের উপস্থিতি গোপন রাখবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিয়ার চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাজে লাগাতে চায় আল কায়েদা। তারা মনে করে, দেশটি এখন এক পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক ও সামরিক ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত। নতুন নেতৃত্বের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিতে এবং শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করতে তারা কাজ করছে।
আবু হানিয়া বলেন, ‘এটি মূলত নিজেদের অবস্থান পুনর্বিন্যাস ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, সে লক্ষ্যে তারা কার্যক্রম পুনর্গঠন করছে। একই সঙ্গে, সিরিয়ার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা কেমন হবে, তা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আল কায়েদা নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। তবে সংগঠন বিলুপ্ত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তারা অস্তিত্বহীন। বরং তারা এখন অপেক্ষা করছে, পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়।’
সূত্র : আল কুদস আরাবি