মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা

মধ্যপ্রাচ্য অর্ডার করতে ক্লিক করুন

গাজার হাসপাতাল ধ্বংসে মার্কিন ‘মার্ক-৮৪’ বোমার ব্যবহার

গাজার হাসপাতাল ধ্বংসে মার্কিন ‘মার্ক-৮৪’ বোমার ব্যবহার
গাজার হাসপাতাল ধ্বংসে মার্কিন ‘মার্ক-৮৪’ বোমার ব্যবহার। ছবি : আল জাজিরা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় হাসপাতাল ও আশপাশের অঞ্চলে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, এই সময়ে তারা ব্যবহার করেছে মার্কিন তৈরি অত্যন্ত শক্তিশালী ‘মার্ক-৮৪’ বোমা। প্রতিটি বোমার ওজন প্রায় ১,০০০ কেজি, যা বিস্ফোরণে বিশাল আকারের গর্ত তৈরি করতে পারে এবং হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংসে সক্ষম। এর ধ্বংসাত্মক শক্তি শত শত মিটারের মধ্যে প্রাণঘাতী ক্ষতি করতে পারে।

গবেষকদের মতে, এই বোমাগুলো শুধু হাসপাতালের আশপাশেই ফেলা হয়নি, বরং সেগুলো ফেলা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে, যেন হাসপাতালের অবকাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয় এবং তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদীভাবে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ইচ্ছাকৃত লক্ষ্যবস্তু

সম্প্রতি ‘প্লস গ্লোবাল পাবলিক হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গাজার ৩৬টি হাসপাতাল এবং ৫৯২টি বোমার গর্তের অবস্থান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। স্যাটেলাইট ছবি এবং ভূ-অবস্থানগত তথ্য ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন, ৯টি হাসপাতাল ছিল বোমার গর্ত থেকে মাত্র ৩৬০ মিটারের মধ্যে, যা সম্পূর্ণ ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এছাড়া, ৩০টি হাসপাতাল ছিল ৮০০ মিটারের মধ্যে, যেখানে অবকাঠামোগত ক্ষতি হওয়ায় হাসপাতালের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, একটি হাসপাতালের কাছেই ৭টি বোমার গর্ত ছিল ৩৬০ মিটারের মধ্যে এবং ২১টি বোমার গর্ত ৮০০ মিটারের মধ্যে। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, হাসপাতালগুলো শুধু দুর্ঘটনাবশত নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল।

মার্ক-৮৪ বোমা : ধ্বংসযজ্ঞের হাতিয়ার

‘মার্ক-৮৪’ বোমা হলো একটি প্রচলিত মার্কিন বোমা, যা মূলত বড় অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য তৈরি। এটি ‘ডাম্ব বোমা’ নামে পরিচিত, কারণ এতে কোনো আধুনিক নির্দেশনা বা লক্ষ্যস্থির প্রযুক্তি নেই। এই বোমা বিমান থেকে সরাসরি ফেলা হয়।  ফলে এটি তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও বেসামরিক জনগণের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

গবেষণায় উঠে এসেছে, ইসরায়েলের গাজা হামলায় ব্যবহৃত অর্ধেক বোমা ছিল মার্ক-৮৪। এতে বোঝা যায়, এ ধরনের বোমা ব্যবহারের মাধ্যমে ইসরায়েল বেসামরিক জনগণের ক্ষতি করার ইচ্ছে করে ।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মার্কিন সহযোগিতা

এই বোমা হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু গাজার হাসপাতালগুলো ধ্বংস করেনি, বরং পরিকল্পিতভাবে মানবিক সেবা প্রদানের সুযোগকেও ধ্বংস করেছে। গবেষণা বলছে, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে প্রায় ২২.৭৬ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৭.৯ বিলিয়ন ডলার সরাসরি সামরিক সহায়তা, যার বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে গাজা হামলায়।

এছাড়া, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র ১৪ হাজার ‘মার্ক-৮৪’ বোমা সরবরাহ করেছে। এই তথ্য প্রমাণ করে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাসপাতালসহ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংসে মার্কিন ভূমিকা প্রত্যক্ষ।

গাজায় মানবিক বিপর্যয়: উদাহরণ ও প্রভাব

১৭ অক্টোবর গাজার ‘আল-আহলি আরবি’ (ব্যাপটিস্ট) হাসপাতালের ওপর হামলা ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম উদাহরণ। এই হামলায় হাসপাতালের চত্বরে অবস্থানরত আহত ব্যক্তি এবং নারী-শিশুসহ অসংখ্য গৃহহীন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। হাসপাতালের অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, গাজার হাসপাতালগুলোতে পরিকল্পিতভাবে এই বোমা হামলার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অচল করা হয়েছে। এটি শুধু তাৎক্ষণিক কো ক্ষতি নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকেও সংকটে ফেলেছে।

গাজায় মার্কিন বোমার মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীর এই আক্রমণ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধবিধির চরম লঙ্ঘন। এটি প্রমাণ করে, যুদ্ধক্ষেত্রে বেসামরিক মানুষ এবং মানবিক সেবা কেন্দ্রগুলোকেও বিনাশের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য পত্রিকা