যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দফায় তিন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর তাদের পরিবারের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’। ওই বার্তায় তারা ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির সময় তাদের প্রতি দেখানো মানবিক আচরণ ও সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর ইসরায়েলি কারাগারে চলা অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করেছে।
হামাসের দপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, ‘আমরা আপনাদের সন্তানদের জীবন রক্ষায় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছি এবং তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেছি। অথচ আমাদের বন্দিরা ইসরায়েলি কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।’
বার্তায় আরও বলা হয়, ‘যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর আমরা ইসরায়েলি নারী বন্দিদের প্রথম দফায় মুক্তি দিয়েছি। আমরা তাদের মানবিক ও সুশৃঙ্খলভাবে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির ক্ষেত্রে এমন কোনো মানবিকতার নজির দেখা যায়নি।’
এদিকে, সদ্য মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দি ও জনসংহতি আন্দোলনের নেতা আহমাদ সাদাতের স্ত্রী আবলা সাদাত ইসরায়েলি কারাগারের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের কারাগারগুলো বন্দিদের জন্য একটি সংকীর্ণ কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানকার নিষ্ঠুরতার তুলনা বিশ্বের কোথাও নেই।’
৬৭ বছর বয়সী আবলা সাদাত আরও বলেন, ‘কারাগারে আমাদের বন্দি ও নারী বন্দিদের মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাদের জীবনযাত্রার অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, তা কল্পনাও করা কঠিন। আগে এসব কারাগার ছিল সংগ্রামীদের শিক্ষা অর্জনের জায়গা। এখন সেগুলো বন্দিদের জন্য কবরস্থানে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন তাদের অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে।’
গত রবিবার থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, যার প্রথম ধাপ চলবে ৪২ দিন। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দফায় বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে পরবর্তী ধাপের বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রথম দফায় হামাস গাজা থেকে তিনজন ইসরায়েলি নারী বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আবলা সাদাত।
হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথম ধাপে তারা ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এর বিনিময়ে ১,৭৩৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবেন। এর মধ্যে ২৯৫ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত।
বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারে ১০ হাজার ৩০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে। অন্যদিকে, গাজায় হামাসের হেফাজতে রয়েছে প্রায় ৯৬ জন ইসরায়েলি বন্দি। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় তাদের হেফাজতে থাকা বেশ কিছু বন্দি নিহত হয়েছে।
সূত্র: আরটি