রাফাহ আজ আর আগের মতো নেই। যুদ্ধের নির্মমতা শহরটিকে বদলে দিয়েছে চিরতরে। ৯০ শতাংশ আবাসিক এলাকা আর সেবাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। যে শহর একসময় ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা, আজ সেটি পরিণত হয়েছে এক মরণপ্রতীম ধ্বংসস্তূপে।
যুদ্ধবিরতির পর বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ফিরে এসেছেন তাদের চেনা শহরে। রক্তাক্ত স্মৃতি এবং হারানো পরিবারের শোক কে সঙ্গে করে। হয় তো বাড়িটিও নেই, মিশে গেছে হায়েনার থাবায়।
ফিরে আসা, ধ্বংসস্তুপে
‘পথটা মোটেও সহজ ছিল না। ধ্বংসাবশেষ আর ভাঙা ভবনের কারণে আমাদের অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে আসতে হয়েছে,’ বলছিলেন ইয়াদ মাদি। তিনি একসময় রাফাহর বাসিন্দা ছিলেন। কিন্তু এখন সে শহর যেন তার অচেনা। ইয়াদ আরও বলেন, ‘ভয় ছিল, কারণ ইসরায়েলি বাহিনী এখনো দক্ষিণ সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে।’
সব বাধা পেরিয়ে অনেকেই ফিরে এসেছেন। বিধ্বস্ত শহরের মাঝেও তারা বাঁধছেন আশার মালা, দেখছেন স্বপ্ন। একজন বলেন, ‘আমরা আমাদের শহর ছেড়ে যেতে পারি না। এই শহর আমাদের পরিচয়। এটা ছেড়ে যাওয়া মানে নিজেদের ছেড়ে যাওয়া।’
জীবন, ফিরে আসবে!
শহরের রাস্তা সচল করার কাজ শুরু করেছে রাফাহ পৌরসভা। পৌরসভার সড়ক পুনর্গঠন কমিটির প্রধান খালেদ শেখ ঈদ জানান, ‘আমাদের প্রথম কাজ ছিল ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে বাসিন্দাদের বাড়ি পৌঁছানোর রাস্তা তৈরি করা। কাজটা কঠিন, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এই প্রচেষ্টায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বহু মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই দৃশ্য শুধু মর্মান্তিকই নয়, বরং মানুষের কলজে ছিড়ে ফেলার মত।
পুনর্গঠন, দীর্ঘ পথচলা
রাফাহ শহরের পুনর্গঠন সহজ কাজ নয়। শুধু ধ্বংসস্তূপ সরালেই সব শেষ হবে না। অবকাঠামো নির্মাণ, মৌলিক সেবা পুনরুদ্ধার—সব মিলিয়ে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এক ত্রাণকর্মী বলেন, ‘আমাদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রচুর অর্থ আর সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। তবে ইচ্ছাশক্তি আর সাহায্য থাকলে এই পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব।’
আজকের রাফাহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। কিন্তু এখানকার মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখেন। তারা স্বপ্ন দেখেন এমন এক রাফাহর, যেখানে ধ্বংসস্তূপের বদলে আবার ফিরে আসবে জীবনের স্পন্দন। তাদের আশা, স্মৃতি আর স্বপ্ন মিশে একদিন রাফাহ আবার প্রাণ ফিরে পাবে।
সূত্র : স্কাই নিউজ