ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন, তখন গাজা উপত্যকার শিশু ও নারীরা ভিন্ন এক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি গণহত্যা , অবরোধ আর প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণায় তারা যেন এক দুঃসহ জীবনের বন্দী। এই কঠিন সময়েও তাদের মধ্যে নতুন প্রশাসনের কাছে শান্তি এবং স্বাভাবিক জীবনের আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট।
যুদ্ধ, অবরোধে এবং প্রত্যাশা
গাজা উপত্যকার নারীরা এবং শিশুরা ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দাইর আল-বালাহ শহরের ‘শহীদ আল-আকসা হাসপাতাল’ ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া জামীলা ওয়াদি এমনই একজন। সাত মেয়ের মা ও দুই ছেলের জননী জামীলা বলেন, ‘আমাদের চাওয়া খুব বেশি নয়। আমরা শুধু একটু শান্তি চাই। আমাদের সন্তানরা অনেক দিন ধরে শিবিরে অনাহারে, অশিক্ষায় দিন কাটিয়েছে। আমরা চাই, এমন একটি পৃথিবী যেখানে আমাদের নিরাপত্তা থাকবে।’
জামীলার বাড়ি ছিল উত্তর গাজায়। ইসরায়েলি বোমায় সেটি ধ্বংস হয়েছে। তিনি তার এক ছেলেকেও হারিয়েছেন। আজও তিনি সন্তানের দেহ উদ্ধার বা তাকে কবর দিতে পারেননি।
তার মতোই নুজহা মুহাম্মদ আলি আরও একজন মা, যিনি আমেরিকার নতুন প্রশাসনের কাছ থেকে ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ট্রাম্প এমন কিছু করুন যা আমাদের সন্তানদের এই নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেবে। আমরা সব হারিয়েছি। আমাদের শুধু স্বাভাবিক জীবনে ফেরার জন্য একটু সাহায্য দরকার।’
হারানো স্বপ্ন, তবু আশার আলো
গাজার শিশুরা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বপ্নগুলোকে আঁকড়ে ধরে আছে। শাজাইয়া এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত ১৫ বছরের রাগদ ওয়াদি বলেন, ‘আমরা চাই ট্রাম্প আগের প্রেসিডেন্টদের মতো না হোন। আমরা যুদ্ধ আর অবরোধের বাইরে একটা স্বাভাবিক জীবন চাই।’
১১ বছরের লিয়ান নাজ্জার যেন গাজার সব শিশুদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা এমন একজন প্রেসিডেন্ট চাই না, যিনি শিশুদের হত্যাকে সমর্থন করেন। আমরা একজন শান্তিকামী প্রেসিডেন্ট চাই, যিনি আমাদের স্বপ্ন পূরণের পথ দেখাবেন।’
১০ বছরের মাইসা আশরাফি বলে, ‘আমি আমার বাড়িতে ফিরে যেতে চাই। আমার ক্লাসরুমে বন্ধুদের সঙ্গে পড়াশোনা করতে চাই। আমরা খুব ছোট ছোট স্বপ্ন দেখি। আমাদের সেই স্বপ্নগুলো পূরণ হোক।’
তবে স্বপ্নগুলো পূরণ করতে প্রয়োজন শিক্ষা, নিরাপত্তা ও বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদা। ১১ বছরের সিবা আল-হাদ্দাদ বলেন, ‘যুদ্ধ আমাদের স্কুল, বাড়ি—সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সাহায্য।’
১২ বছরের ফাতি আল-মিদনা বলেন, ‘যুদ্ধ আমাদের শুধু ঘরবাড়ি নয়, শিক্ষা, খাদ্য আর জীবনের প্রয়োজনীয় সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্ট যদি আমাদের জন্য কিছু করেন, তবে হয়তো আমরা আবার উঠে দাঁড়াতে পারব।’
সাময়িক যুদ্ধবিরতি
গত রবিবার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। প্রথম ধাপে এটি চলবে ৪২ দিন। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আলোচনা হবে। মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্যোগের মধ্যস্থতাকারী।
আজ সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৭৮তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। গাজার শিশুদের আকাঙ্ক্ষা, ট্রাম্প যেন এমন কিছু করেন, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। তাদের বার্তা একটাই—‘বাইডেনের মতো হবেন না, আমাদের শান্তি দিন।’
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি