সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনামলের কারাগারগুলো নিষ্ঠুরতার প্রতীক হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ২০১১ সাল থেকে এই কারাগারগুলোর দেয়ালে বন্দিদের খোদাই করা বার্তা এবং চিত্রগুলো তাদের দুঃসহ কষ্ট, সাহস এবং ভালোবাসার নিদর্শন হয়ে আছে।
সম্প্রতি নিউজউইক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আসাদ সরকার পতনের পর কারাগারগুলোর দেয়ালে আবিষ্কৃত এই বার্তাগুলো মানবতার করুণ চিত্র তুলে ধরেছে। লেখক আমির দাফতরি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এসব বার্তা এবং চিত্র হাতের কাজের মতো জীবন্ত, যা বন্দিদের অসহ্য কষ্ট এবং গণহত্যার সাক্ষী।
দেয়ালের বার্তায় জীবনের গল্প
দেয়ালে খোদাই করা বার্তাগুলো হারিয়ে যাওয়া জীবনের চিহ্ন বহন করে। পুরনো লেখার ওপর নতুন লেখার স্তর প্রজন্মের পর প্রজন্মের কষ্টের ইতিহাস তুলে ধরেছে। কোনো লেখা প্রিয়জনের জন্য ভালোবাসার কথা বলে, আবার কোনো লেখা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা জানায়। এক বন্দি লিখেছেন, ‘তোমাকে মিস করি।’ আরেকজন ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে তার মাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘মা, কষ্ট পেও না। এটাই আমার ভাগ্য।’
কিছু বার্তায় সময়ের হিসাব রাখা হয়েছে। দেয়ালে আঁকা ক্যালেন্ডারে দিন গোনা হয়েছে এবং লেখা হয়েছে, ‘এক বছর পেরিয়ে গেল।’ অন্য বার্তাগুলোতে ছিল দুয়া, যেমন ‘হে আল্লাহ, শান্তি দাও’ বা ‘ধৈর্য ধরাই সুন্দর। আল্লাহই সাহায্যকারী।’
কষ্টের মাঝেও বন্দিদের কল্পনার শক্তি প্রকাশ পেয়েছে। কার্টুনের মুখাবয়ব, কিংবা পাহাড় ও নেকড়ে দিয়ে সাজানো কল্পিত দৃশ্য বাস্তবতা থেকে পালানোর মানসিক চেষ্টার উদাহরণ।
দামেস্কের কুখ্যাত প্যালেস্টাইন ব্রাঞ্চ ডিটেনশন সেন্টারটি বন্দিদের ওপর চালানো নির্যাতনের জ্বলন্ত প্রমাণ। জানালাবিহীন সেলগুলোতে বন্দিরা সহ-বন্দিদের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছেন। নিজের মৃত্যু অনিবার্য মনে করেও দেয়ালে খোদাই করা বার্তাগুলোর মাধ্যমে তারা তাদের সাহসিকতার নিদর্শন রেখে গেছেন।
নিউজউইক বলছে, এই বার্তাগুলো শুধুমাত্র বন্দিদের কষ্টের কথা বলে না, বরং ইতিহাসের এক নীরব অধ্যায়কে তুলে ধরে। এটি সিরিয়ার সংঘাতের মানবিক মূল্য এবং আসাদের শাসনামলে সংঘটিত অপরাধগুলোর বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার এক করুণ স্মারক। এই লেখাগুলো বেঁচে থাকা বন্দি এবং তাদের পরিবারের জন্যও সমর্থনের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
সূত্র: নিউজউইক, আল জাজিরা