দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শেষে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে অবশেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিল যে তারা হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত থামবে না। তবে দীর্ঘ এ লড়াইয়ের পর দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযান কোনো লক্ষ্য পূরণে সফল হয়নি। বরং এই যুদ্ধে হামাসের প্রতিরোধ এবং ইসরায়েলের পরাজয়ের স্বীকারোক্তি বিশ্ববাসীকে নতুন করে ভাবিয়েছে।
যুদ্ধ শেষের পর ইসরায়েলের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও বিশ্লেষকদের মন্তব্যে উঠে এসেছে তাদের অসহায়তা ও পরাজয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা। ইসরায়েলি সাংবাদিক জিও রুবিনস্টাইন এক মন্তব্যে বলেছেন, ‘যদি আজকের দিনে ইয়াহইয়া সিনওয়ার বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি আরব জাতির পিতা হয়ে উঠতেন।’ এ মন্তব্য হামাসের নেতৃত্বের প্রতি ইসরায়েলের অনিচ্ছাকৃত স্বীকৃতি ও সম্মানের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের সব প্রচেষ্টা বৃথা প্রমাণিত হয়েছে। এ যুদ্ধে যা কিছু করেছি, তার কোনো ফল আসেনি।’
বিশ্লেষক এলন মিজরাহি বলেন, ‘ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে গিয়ে উল্টো তাদের কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারা শুধু ইসরায়েল নয়, পুরো পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং বিজয় অর্জন করেছে।’
সাংবাদিক ইয়োসি ইয়াহুশুয়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘নেতানিয়াহু রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এবং সেনাবাহিনী সামরিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে কোনো বিজয় অর্জন সম্ভব হয়নি।’
এদিকে ইসরায়েলের জাতীয় পত্রিকা হারেৎস সম্পাদকীয়তে মন্তব্যে বলেছে, ফিলিস্তিনিরা নিজেদের দেশ রক্ষার ক্ষেত্রে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি, এবং আমরা গাজার ওপর কখনোই বিজয়ী হতে পারব না, এমনকি যদি আমরা পুরো মধ্যপ্রাচ্য দখল করি।
ইসরায়েলের এসব স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে যে, হামাস তাদের সামরিক কৌশল ও দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে ইসরায়েলের শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এই লড়াই শুধু হামাসের জন্য নয়, পুরো মুসলিম ও আরব বিশ্বের জন্য একটি অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববাসী এই ঘটনায় হামাসের শক্তি ও প্রতিরোধের ক্ষমতা যেমন চিনতে পেরেছে, তেমনি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে চরম আত্মসমালোচনা তাদের সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতাকে সামনে এনেছে।
সূত্র: আরাবি ২১