যুদ্ধ মানুষের জীবনে কতটা নির্মম হতে পারে, তা ছোট্ট আদলি আসলিয়ার চোখে তাকালেই বোঝা যায়। মাত্র দুই বছর বয়সী এই শিশু আজ একা। ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় শহিদ হয়েছেন বাবা-মা। মায়ের মৃত্যু হয়েছিল কয়েক মাস আগে, বাবার মুখও আর কোনোদিন দেখতে পাবে না আদলি। এখন তার একমাত্র আশ্রয় দাদির কোল।
স্কুলের এক শ্রেণিকক্ষে দাদির কোলে বসে দরজার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে আদলি। তার ধারণা, বাবা এই দরজা দিয়ে একদিন ঠিকই আসবেন। আদলির জীবনের প্রতিটি সকাল শুরু হতো বাবার সঙ্গে খুনসুটিতে। বাবা তাকে আকাশে ছুঁড়ে দিতেন, আবার ধরে হাসি ছড়িয়ে দিতেন তার ছোট্ট মুখে। আজ সেই হাসি হারিয়ে গেছে যুদ্ধের নিষ্ঠুর বাস্তবতায়।
আদলি এখনো বোঝে না, বাবা-মা কেন তাকে একা রেখে চলে গেছেন। দাদি যখন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তারা জান্নাতে চলে গেছেন, তখন তার নিষ্পাপ চোখে অবিশ্বাসের ছাপ পড়ে।বুঝে উঠতে পারে না কিছুই।
আদলি ছিল তার বাবা-মায়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফসল। চার বছর ইনফার্টিলিটি চিকিৎসার পর তারা এই শিশুর মুখ দেখার আনন্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দ স্থায়ী হয়নি। আদলির মা গত নভেম্বর মাসে ইসরায়েলি হামলায় শহিদ হন। মায়ের আদরবঞ্চিত শিশু তখন বাবার ছায়াতেই আদর খোঁজে বেড়াত।
আদলির দাদি জানান, ‘মায়ের মৃত্যুর পর থেকে সে তার বাবার সঙ্গে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকত, যেনবা সে বুঝতে পারত বাবাও তাকে ছেড়ে চলে যাবে একদিন। প্রতিদিন সকালে তার বাবা যখন কাজে যেতেন, তখন তাকে শান্ত করা সহজ হতো না। অনেক সময় তার বাবা তাকে নিজের সাথে সেলুনে নিয়ে যেতেন।’
মৃত্যুর কয়েকদিন আগে থেকেই আদলি বাবাকে ‘বাবা হমদ’ বলে ডাকা শুরু করে। এই ডাক শুনে বাবার মুখে যে আনন্দ ফুটেছিল, তা আর বেশিদিন টিকল না। এখন সেই ডাক আর কোনোদিন তার বাবার কানে পৌঁছাবে না।
আদলি শুধু একমাত্র নয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলের বর্বর হামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি শিশু তাদের বাবা-মাকে হারিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৩,৪৭১টি পরিবার পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।
দাদি এখন আদলির একমাত্র আশ্রয়। তিনি বলেন, ‘আদলি আমার কাছে একটি আমানত। যখনই তাকে দেখি, তার মায়ের কথা মনে পড়ে। তার মা চলে যাওয়ার আগে আমার কাছে এই দায়িত্ব দিয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন এই ছোট্ট শিশুর মুখ দেখে আমি নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করি।’
যুদ্ধ শুধু ঘরবাড়ি ভেঙে দেয় না, ভেঙে দেয় অসংখ্য শিশুর ভবিষ্যৎ। আদলির মতো আরও অনেক শিশু আজ বাবা-মায়ের আদর বঞ্চিত। যুদ্ধের এই অমানবিকতা কি কোনোদিন থামবে? আদলির মতো শিশুরা কি কোনোদিন বুঝতে পারবে, কেন তাদের বাবা-মা চিরতরে হারিয়ে গেল?
সূত্র : সাফা