সিরিয়ার প্রখ্যাত দাঈ ও আলেম শেখ সারিয়া রিফাইয়ের মৃত্যুতে শোক জানাতে গিয়ে দেশটির নতুন প্রশাসনের নেতা আহমদ আশ শারা বলেছেন, ‘সত্য ও ভালোবাসার ভিত্তিতে আমাদের রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হবে।’ তিনি সিরিয়ার গৌরবময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশ একসময় আরব ও ইসলামি বিশ্বের জন্য আলোকবর্তিকা ছিল।’
বুধবার ইস্তাম্বুলে ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করা শায়েখ সারিয়া রিফাইয়ের শোকসভায় এই মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলের ফাতিহ মসজিদে জানাজা শেষে তার মরদেহ দামেস্কে দাফন করা হয়।
আহমদ আশ-শারা বলেন, ‘আল্লাহ শায়েখ সারিয়া রিফাইকে তার অসীম রহমতের ছায়ায় স্থান দিন। তিনি শামের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন।’
আহমদ আশ-শারা তার বক্তব্যে সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অতীতের সংকট তুলে ধরে বলেন, ‘গত ছয় দশকে আমাদের দেশ বিভাজন, নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। এ সময়ে মানুষ ছিন্নমূল হয়েছে, দেশ ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে, অনেকে সাগরে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে। অনেক মা আজও তাদের সন্তানদের জন্য কাঁদছেন। বেঁচে থাকা মানুষগুলো বারবার নিপীড়নের মুখোমুখি হয়েছে, বিশেষ করে বাশার আল-আসাদ সরকারের ব্যারেল বোমার হামলায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ সিরিয়া তার সঠিক অবস্থানে ফিরে এসেছে। অত্যাচারী শাসক বিদায় নিয়েছে, আর শামের বরকত আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৩ বছরের নির্বাসন শেষে আমাদের বিজ্ঞ আলেমরা দেশে ফিরেছেন। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন সূচনা।’
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইতিহাসে ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে দেশ গড়ে তুলতে হবে। শাম একসময় ইসলামি বিশ্বের কেন্দ্র ছিল। এখান থেকেই চীন থেকে আন্দালুস পর্যন্ত শাসন পরিচালিত হতো। আমাদের সেই গৌরব আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। সত্য ও ভালোবাসার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে হবে।’
আহমদ আশ-শারা আরও বলেন, ‘সিরিয়া আমাদের সকলের জন্য একটি আমানত। দেশকে পুনর্গঠনের এই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে পারি না। আজকের এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
শায়েখ সারিয়া রিফাইয়ের জীবন ও অবদান
শায়েখ সারিয়া রিফাই ১৯৪৮ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শায়েখ আবদুল করিম রিফাইর দামেস্কে ইসলামি শিক্ষা ও সমাজসেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। শায়েখ সারিয়া পিতার আদর্শ অনুসরণ করে ইসলামি শিক্ষা ও দাওয়াতে সক্রিয় হন।
তিনি মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং তাফসিরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। দামেস্কে তিনি ‘যায়েদ ইবনে সাবেত’ নামে একটি কুরআন শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
২০১২ সালে হিমসের হুলায় সংঘটিত গণহত্যার পর তিনি বাশার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। ইস্তাম্বুলে বসবাসকালে তিনি হিফয আল-নিমা নামে একটি দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ায় বিভিন্ন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল।
শায়েখ সারিয়া রিফাই তার জীবদ্দশায় ইসলামি দাওয়াতে ও সমাজসেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে তার জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। পরে তাকে দামেস্কে দাফন করা হয়।
সূত্র : আনাদোলু